logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
শ্রোতা-বক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করেই মত প্রকাশ করতে হবে
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৯:১০:১৫
image

মত প্রকাশের সময় শ্রোতা এবং বক্তা- উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে বলে মনে করেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউল আলম ভুঁইয়া।


তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে যেমন খুশি তেমন বলা নয়। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীল আচরণের পরিচয় দিতে হবে। অপরের স্বাধীনতা, ডিগনিটি, সম্মানবোধের দিকে খেয়াল রেখেই মত প্রকাশ করতে হবে।  


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে বসে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ড. শফিউল আলম। আলাপচারিতায় ছিলেন মহিউদ্দিন মাহী।


আইসিটি আইন নিয়ে বলুন


আইসিটি আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা খুবই জরুরি একটি আইন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই আইসিটি আইন কেন?


নিউ মিডিয়া আসার ফলে নিজেকে প্রকাশ করার অনেক সুযোগ এবং সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন এই সুযোগ এবং সম্ভাবনার অপব্যবহারেরও সুযোগ আছে। এটার অপব্যবহার করে নানা ধরনের ক্ষতি করা যায়। এই ক্ষতি প্রতিরোধে এই আইনটি ভূমিকা রাখতে পারে।


আইনের ৫৭ ধারার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?


এই ধারাটির প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে অস্পষ্ট। এটা আরও পরিষ্কার করতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়কে ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। কী করলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে, কী করলে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে-এসবের সংজ্ঞা থাকতে হবে। কারণ অস্পষ্টতার কারণে অনেক নিরাপরাধ মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


অনেকে তো ধারাটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। আপনার মত কী?


আমি বাতিলের পক্ষে নই। আমি চাই এটি সংশোধনী আকারে আসুক। আমরা মানহানি মামলার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় দেখেছি। সেখানে কী করলে মানহানি হবে, সেটার সংজ্ঞা দেয়া আছে। এবং ৫০১ ও ৫০২ ধারায় শাস্তির কথা আছে। শাস্তির বিষয়ে বলা আছে দুই বছর। এটা অবশ্য প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে।


কিন্তু আইসিটি আইনে তো সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর করা আছে।


এটা নিয়েও বিতর্ক আছে। প্রিন্টে লিখলে দুই বছর। আর ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লিখলে ১৪ বছর। এটা নিয়েও পর্যালোচনা হতে পারে।


আইসিটি আইনটি কি বেশি কঠিন হয়ে গেল না?


আইসিটি আইনটি বেশি কঠিন করা হয়েছে। এখানে শাস্তির বিধানও যেমন বেশি তেমনি এটা জামিন অযোগ্য। আবার কগনিজেবল। অপরাধের ধরন বিচার না করে একই ধরনের শাস্তির বিধান থাকাটাও মুশকিল বলে আমার কাছে মনে হয়। এসব কিছু স্পেসিফাইড হলে ভালো হয়।


ফেসবুক বা স্যোসাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করার কোনো মাধ্যম থাকা উচিত কিনা?


স্যোসাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে আলাদা কমিশন হতে পারে। তারা নিউ মিডিয়া সম্পর্কিত তথ্যগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সুপারিশ করবে। এটা না হলে অনেকে গুরুতর অপরাধ করেও যে শাস্তি পাবে। আর কম অপরাধ করেও একই শাস্তি পাবে। সেজন্য এটি মনিটরিং এ কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে। পুলিশ কমিশনের মাধ্যমে যাবে। কমিশন এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দেবে- কী রকম শাস্তির দেয়া যাবে।


আর কী করা যেতে পারে?


জনসচেতনা খুব জরুরি। আমরা রামুর ঘটনা জানি। সেখানে কিন্তু ফটোসপের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে দাঙ্গা বাজানো হয়েছে। এই জন্যই জনমনে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষাটা এখানে খুবই জরুরি। স্যোসাল মিডিয়ার ব্যবহার সবাইকে জানতে হবে।  


ফেসবুকে অনেকে অনেক বিষয় মন্তব্য করেন। কিন্তু এর সীমারেখা থাকা উচিত কি না?


অবশ্যই সীমারেখা থাকতে হবে। স্যোসাল মিডিয়ার মতামত প্রকাশের আগে এটার ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ফেসবুকে যখন একটি কনটেন্ট আপলোড হয় তখন কিন্তু সেখানে অনেকগুলো অপশন থাকে- পাবলিক, প্রাইভেট, ফেন্ডস।


এখন আপনি কোন ক্যাটাগরিতে এটি পোস্ট করবেন। পাবলিক করলে কিন্তু আপনাকে লিচেনার এবং স্পিকার- উভয়ের স্বার্থ মাথায় রেখেই করতে হবে। কারণ ওখানে এমন কোনো মন্তব্য করা যাবে না যাতে অপরের মানহানি হয়। বা সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়।


পাবলিক কমিউনিকেশন এর লক্ষ্যটা কী?


পাবলিক কমিউনিকেশন এর লক্ষ্যটাই হচ্ছে পাবলিকের স্বার্থ দেখা। যাতে কারও স্বার্থ নষ্ট না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখাই পাবলিক কমিউনিকেশনের মূল কাজ। কোনটা করলে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। কোনটা করলে সমাজে অস্থিরতা হবে- সে বিষয়গুলাকে এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ আমিও আবারও বলছি মত প্রকাশে মানে যা ইচ্ছা তাই বলা নয়।   


স্যোসাল মিডিয়ার ব্যবহারবিধি জানাতে করণীয় কী?


স্যোসাল মিডিয়ার ব্যবহারবিধি জানাতে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ডিজিটাল মিডিয়া সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে তথ্য থাকতে হবে। যেন শিক্ষার্থীরা এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়। করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে তারা জানতে পারে। কর্মশালা করা উচিত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফেসবুকে আমি কী বলবো, কী বলবো না সেটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফেসবুক, টুইটার কিন্তু খুব শক্তিশালী মিডিয়া। এটা একজন থেকে আরেক জন দ্রুত ছড়ায়।


আইসিটি আইনে আর কোন বিষয়টিতে পরিবর্তন আনা যায়?


আইনটির শাস্তির বিষয়ে পর্যালোচনা করা যায়। অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা যায়। ঢালাওভাবে একই শাস্তির বিধানটা অমানবিক হয়ে যায়। এ ছাড়া অপরাধের বিষয়গুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট করার জন্য বিধি সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে অস্পষ্ট বিষয়গুলা স্পষ্টকরণ করা যেতে পারে।


আইনটি কগনিজেবল এবং জামিন অযোগ্য। এটা নিয়ে বলুন।  


আইনটি অত্যন্ত কঠিন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা কগনিজেবল আইন। অর্থাৎ পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই কোনো সন্দেহভাজন লোককে ধরতে পারবে। কিন্তু এখানে পুলিশকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তারপরেও কাউকে হয়রানি করা ঠিক হবে না। আর জামিনের বিষয়টি বিচারকের ওপর ছেড়ে দেয়াটাই ভালো। এই জায়গাটা উঠিয়ে দিলেই ভালো হয়। অপরাধের মাত্রা দেখে বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জামিন দেবেন কি দেবেন না। এটা নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।


সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ


আপনাকেও ধন্যবাদ