logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
গণমাধ্যমের সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখি: ওমর ফারুক
১২ অক্টোবর, ২০১৫ ১১:৫৭:৩৬
image

ওমর ফারুক চৌধুরী। যুবলীগের চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। এর আগে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি ছিলেন।


ওমর ফারুক মনে করেন, যুবকরা সমাজের মূল চালিকাশক্তি। নিজেকে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময় এটি। সাম্প্রতিক রাজনীতি, সংগঠন, পরিকল্পনা আর নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। আলাপচারিতায় ছিলেন তানিম আহমেদ


ব্যবসা-রাজনীতি একসঙ্গে সামলান, দুটো জীবন একসঙ্গে চালানোর বিরূপ অভিজ্ঞতা আছে?


ওমর ফারুক চৌধুরী: জীবনের উত্থান-পতন দুটোই দেখেছি। এক সময় আমদানি-রপ্তানিকারক ছিলাম, এরপর শিল্পপতি।


২০০৪ সালে বিএনপি সরকার আমার নামে মামলা করেছিল। তখন এলসি খুলতে পারিনি। এজন্য ব্যবসায় ধস নামে। এক এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও ঝামেলায় পড়তে হয়। তখন বুঝেছি, ক্ষমতা না দেখানোটাই ক্ষমতা। দেখেছি, অভিযোগ না করলে সহানুভূতি পাওয়া যায় না। কথাটি সত্যি। কিন্তু অভিযোগ করে সহানুভূতির নাম করুণা। এই করুণা নিয়ে মানুষ ভালো অবস্থানে যায়।


গণমাধ্যমে আপনাদের নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে তা কিভাবে দেখছেন?


বেগম খালেদা জিয়া যতবার আমাদের সমালোচনা করবেন ততই আমাদের ভালো। আমি চাই তিনি আমাদের সমালোচনা করুক। তিনি যতবার আমাদের কথা বলবেন ততবার মানুষ আমাদের কথা জানবে। তাছাড়া সমালোচনার প্রয়োজন আছে। সমালোচনার ফলে ব্যর্থতাগুলো জানা যায়। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসলে এ নিয়ে তদন্ত করি। তদন্তে আমার সংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।


ডিআইজি সাহেব যুবলীগের ব্যাপারে যখন অভিযোগ করে তখন আমার ভাল লাগে। কারণ তাদের মধ্যে যুবলীগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তালিকা চেয়েছি। আমার কাছে কে দল করছে সেটা বিষয় না। যুবলীগে থাকা অপরাধীদের ধরতে না পারলে আমাকে তালিকা দিন। আমি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।


যাদের ব্যাপারে অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় কি?


যারা যুবলীগ করেন তারা অবশ্যই দেশের সাধারণ মানুষ। কোনো ফেরেস্তা এই সংগঠনে নেই। যখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, আমরা তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কোন অপরাধীকে এ সংগঠনে প্রশ্রয় দেয়া হয় না। তবে যতটা না ঘটনা ঘটে, তার চেয়ে নেতিবাচক প্রচারই বেশি হয়। দেশের যে কোনো অপরাধ হলেই যুবলীগ করেছে বলে ঢালাওভাবে প্রচার করা হয়। বাস্তব ঘটনা খতিয়ে দেখার পর সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বন্ধুরাই লজ্জা পান। কারণ সব ঘটনাই যুবলীগ ঘটায় না।


নেতিবাচক সংবাদকে সংগঠনের জন্য চাপ মনে করেন কি?


আমরা কখনোই সমালোচনাকে ভয় পাই না। বরং সমালোচনার ফলে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পাই। যেসব এলাকার খোঁজখবর রাখা সম্ভব হয়, সমালোচনার ফলে সেসব এলাকার খবর নেওয়ার সুযোগ হয়। তবে সব ঘটনার সঙ্গে যুবলীগ জড়িত এভাবে বলা ঠিক নয়। ইতিমধ্যে মাগুরায় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা এবং চাঁদপুরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাই এর প্রমাণ। প্রথমদিকে গণমাধ্যমে যুবলীগের নাম এলেও পরবর্তীতে সঠিক বিষয়টি উঠে আসে। যেসব গণমাধ্যম যুবলীগ-যুবলীগের ক্যাডার বলে প্রচার করেছে তারাই আবার পরবর্তীকালে সত্য ঘটনাটি দেশবাসীকে জানিয়েছে। কাজেই গণমাধ্যমের বন্ধুদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যেখানেই যে কোনো ঘটনা ঘটবে আপনারা বস্তুনিষ্ঠ তথ্য লিখুন, সংশ্লিষ্টদের নাম-পদবিসহ লিখুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।


নেতিবাচক সংবাদ বন্ধে যুবলীগের করণীয় কি?


আমাদের আচার-আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। অনেক সময় আমাদের আচার-আচরণে শুভানুধ্যায়ীরা মনে আঘাত পান। স্বাধীনতার পক্ষের যুব সমাজ আমাদের শক্তি। ফাইভ স্টার, সেভেন স্টার বা কুড়ালতন্ত্র নয়, দেশের সুস্থ মানসিকতা মূল্যবোধসম্পন্ন যুবকদের নিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আদর্শের সংগঠন যুবলীগ। তাই যুবলীগের প্রত্যেকটা কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে।


যুবলীগের সাংগঠনিক কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?


যুবলীগ কখনো কমিটির নামে বাণিজ্য করে না। প্রকাশ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আমাদের কমিটি গঠিত হয়। রাজনীতিকে আমি সমাঝোতার শিল্প মনে করি। জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। আবার যিনি জেলার সমন্বয়কারী তারও পছন্দ থাকতে পারে। সবার তালিকা সমন্নয় করে তিন মাসের জন্য আমরা একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করি। অনেক জায়গায় জাতীয় নেতারাও তালিকা দেন। পরে দুটি তালিকার সমন্বয় করে কমিটি গঠন করা হয়। সুতরাং কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ সত্য নয়।


যুবলীগ আসলে কী করে?


সংগঠন মানে আন্দোলন এবং কর্মসূচি। এ দুটিকে বাদ দিলে সংগঠন বিনোদন ক্লাবে পরিণত হয়। সরকারে থাকলে সংগঠনের মূল কাজ হলো কর্মসূচি। আর বিরোধী দলে গেলে আন্দোলন। সংগঠনবিহীন আন্দোলন যেমন নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে, তেমনি আন্দোলনবিহীন সংগঠন বিনোদন ক্লাবে পরিণত হয়। সংগঠনে যত বেশি কর্মসূচি রাখা যাবে, সংগঠন তত বেশি শক্তিশালী হবে। আমাদের একটি ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’ রয়েছে। যুবলীগই একমাত্র সংগঠন, যে সংগঠনের নিজস্ব প্রকাশনা ও গবেষণা সেল আছে।


আজকে রাজনীতির ধরন পাল্টে গেছে। এখন আর পেশীশক্তি দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি করতে হলে বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জন ও বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে। যুব গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করছি। ইতিমধ্যে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ওপর ২৮৫টি বই বের করেছি। তার মধ্যে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন বইটি জাতিসংঘে জমা দেওয়া আছে।


অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়কের দর্শনের ওপর প্রকাশনা নেই। এটা কেবল যুবলীগই করেছে। এ ছাড়া ‘শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ এবং ‘গণ পুড়িয়ে তন্ত্র দিয়ে কী করবেন ম্যাডাম’ নামে দুটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বইপুস্তকও পড়াশোনা করেন।


যুবলীগের মত যুব সংগঠন কেন প্রয়োজন?


যুবকরা সমাজের মূল চালিকা শক্তি। মানুষের যৌবনকালই হচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময়। সৃষ্টির কালই হলো যৌবনকাল। যৌবনের সঞ্চয় বৃদ্ধকালের অবলম্বন। শৈশবে লজ্জা, যৌবনে ভারসাম্য এবং বার্ধক্যে ব্যয় সংকোচন ও দূরদর্শিতার প্রয়োজন। যিনি সৃষ্টিশীল তিনিই যুবক। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য যুবলীগের প্রয়োজন। যা ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শেখ ফজলুল হক মনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


সংগঠনের আয়-ব্যয়ের উৎস কি?


কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মাসিক চাঁদার উপর সংগঠনের আয় নির্ভর করে। ১৪৮ জন সদস্য মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেন। এছাড়া প্রকাশনা বিক্রি করেও আমাদের আয় হয়। সংগঠনিক সভা সেমিনার, লিফলেট, পুস্তিকা, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পত্রিকায় সাপ্লেমিন্টারি প্রকাশসহ বিভিন্ন কাজে এসব টাকা ব্যয় হয়।


যুবলীগের পরবর্তী সম্মেলন?


সংগঠন মানে শুধু কাউন্সিল, বিষয়টি এমন নয়। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চাইলে যে কোনো সময় যুবলীগের কাউন্সিল হতে পারে। আর ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে আমি অতীত হয়ে যাবো। এই অতীতকে যে কোনো সময় আমি বরণ করে নিতে প্রস্তুত।


ছাত্রলীগের বয়সের একটি কাঠামো আছে। আপনি কি মনে করেন যুবলীগেরও বয়স কাঠামো নির্ধারণ করা প্রয়োজন?


যার মধ্যে তারুণ্য আছে তিনিই যুবক। এটা বয়সের কাঠামো দিয়ে নির্ধারণ হয় না। সৃষ্টিশীলতা দিয়ে নির্ধারিত হয়।