logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
এক বছরেই ঢাকা হবে যানজটমুক্ত নগরী
০৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:১৯:১২
image

এক বছরের কম সময়ে রাজধানী ঢাকার ‘ভয়াবহ’ সমস্যা যানজট চিরতরে বিদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান। তার মতে, ঢাকার প্রধান সমস্যা যানজট। যানজটের কারণে শুধু এই শহরে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি তো রয়েছেই। এসব সমস্যা সমাধানে বিশেষ কৌশল আবিষ্কার করেছেন এই প্রকৌশলী।


ইতোমধ্যে তার এই কৌশল বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিশেষ এই কৌশল বাস্তবায়নে কাজ করছে।


নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রকৌশলী কামরুল হাসানের সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়েছে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের। তার সঙ্গে আলাপে ছিলেন মহিউদ্দিন মাহী।


ঢাকাটাইমস:  যানজট নিরসনে আপনার বিশেষ কৌশল সম্পর্কে কিছু বলুন।


কামরুল হাসান: যানজট নিয়ে ঢাকাবাসীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা খুব পুরনো। কারণ যানজট শুধু মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টাই নষ্ট করে না, অনেক করুন কাহিনীরও জন্ম দেয়। যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে অনেক রোগী হাসপাতালে যেতে পারে না। পথেই নির্মম মৃত্যুর ভাগ্য বরণ করতে হয়। এরকম ঘটনাও আমি দেখেছি। এছাড়া পরিবেশ দূষণের ঘটনা তো আছেই।


সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হিসেবে রাস্তা-ঘাট-যানজট এসব নিয়ে টুকটাক কাজ করতাম আগে থেকেই। যানজট নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছি। গবেষণার পর এই নতুন ধারণাটি পাওয়া সম্ভব হয়েছে।


ঢাকাটাইমস: আপনার এই নতুন কৌশল রাস্তায় কীভাবে কাজ করবে?


কামরুল হাসান:  আমার এই বিশেষ কৌশল বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়কে 'এক মুহূর্ত না থেমেই গাড়ি চলবে '! সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা ইন্টারসেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেইসঙ্গে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ ধরনের ইউটার্ন স্থাপন করতে হবে। এতে সড়কে আর সিগন্যাল পড়বে না। চালক মূলত সড়কের ইন্টারসেকশনের সিগন্যালে পড়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হন। যে কোনো দু'দিক থেকে সরাসরি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়ে একটু বাড়তি জায়গা নিয়ে সড়কে 'অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন' স্থাপন করে এ সিনগ্যাল পদ্ধতি এড়ানো সম্ভব।


ঢাকাটাইমস:  যানজট নিরসনে এই পদ্ধতি কীভাবে ভূমিকা রাখবে?


কামরুল হাসান:  শাহবাগ ক্রসিংয়ের কথাই ধরা যাক। এ ইন্টারসেকশনের চারদিক থেকে চারটি রাস্তা শাহবাগ মোড় ক্রস (অতিক্রম) করেছে। ফলে একটি রাস্তা খোলা থাকলে ট্রাফিক পুলিশ বন্ধ রাখেন বাকি তিনটি রাস্তা। একটি রাস্তা ৫ মিনিট করে বন্ধ করা হলেও ১৫ মিনিট পর যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় অন্য রাস্তার যাত্রীদের। এ সময়ে দীর্ঘ যানজটও লেগে যায়। নতুন পদ্ধতিতে কোনো রাস্তাই বন্ধ রাখতে হবে না। সব রাস্তা দিয়ে সারাক্ষণ গাড়ি চলতে পারবে। শাহবাগের চার রাস্তার ইন্টারসেকশনের ক্ষেত্রে সুবিধা মতো উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম এর যে কোনো একটি সড়ক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করবে। এটা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সড়কে স্থায়ী ডিভাইডার স্থাপন করতে হবে। যারা সরাসরি যেতে পারবে না, তাদের জন্য প্রতিটি সড়কে 'অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন' থাকবে। এটি ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত দিকে যাওয়া যাবে। ইন্টারসেকশন বন্ধ করা হলেও শুধু ডানে মোড় নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ইন্টারসেকশনের কাছাকাছি মূলত ডানে মোড় নেওয়ার জন্যই 'অভ্যন্তরীণ ইউটার্ন'ব্যবহার করা হবে।


ঢাকাটাইমস: এটি বাস্তবায়ন হলে কী ঢাকায় মোটেই যানজট থাকবে না?


কামরুল হাসান:  এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকায় মোটেই যানজট থাকবে না। কারণ গাড়ি যখন চলমান থাকবে। তখন তো যানজট হওয়ার ‍সুযোগ নেই। গাড়ি নির্ধারিত রুটে গন্তব্যে যাবে। এতে কোনো বাধার সৃষ্টি হবে না।


ঢাকাটাইমস: আপনার এই বিশেষ কৌশল বাস্তবায়নে ব্যয় কেমন হবে?


কামরুল হাসান: এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে ব্যয় খুবই কম। প্রচলিত অন্য অন্য পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের ব্যয়  ১০০ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম।


ঢাকাটাইমস: পুরো ঢাকায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব কি না?


কামরুল হাসান: পুরো ঢাকায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে সব জায়গায় তো এটি লাগেও না। অলিগলিতে তো আর যানজট থাকে না। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।


ঢাকাটাইমস: পুরো ঢাকায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে সময় কেমন লাগতে পারে?


কামরুল হাসান: ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে এক বছরেরও কম সময় লাগবে।


ঢাকাটাইমস: ঢাকা ছাড়া অন্য শহরে কি এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব?


কামরুল হাসান:  এ পদ্ধতিতে শুধু ঢাকা শহর নয়, যে কোনো এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব। সড়কের ভেতরে ইউটার্ন সড়কের জন্য শুধু কিছুটা বাড়তি জায়গা প্রয়োজন হবে। সরকার চাইলে এটি ব্যবস্থা করা কঠিন কিছু নয়।


ঢাকাটাইমস:  এটি বাস্তবায়নে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না?


কামরুল হাসান: যে কোনো কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকে। ভালো কোনো উদ্যোগ কোনো চ্যালেঞ্জই থামাতে পারে না। শুধু দরকার সদিচ্ছা ও উদ্দেশ্য।


ঢাকাটাইমস: ঢাকার যানজট তো বেশ পুরনো। এতো সুন্দর উদ্যোগ এতো দিনে বাস্তবায়ন হল না কেন?


কামরুল হাসান: অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি এই নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছি। অনেক দপ্তরে গিয়েছি। এটা নিয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব তো সরকারের। আমি হয়তো কারিগরি সহায়তা দিতে পারি। সর্বশেষ চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে ডাকা হয়। সেখানে আমার এই কৌশল নিয়ে অনেক পর্যালোচনা হয়েছে। এরপর এটি তারা গ্রহণ করেছেন। তবে আমি চাই এটি যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। কারণ এর বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগার কথা না।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।


কামরুল হাসান: আপনাকেও ধন্যবাদ।


(ঢাকাটাইমস/ ৪ ডিসেম্বর/ এমএম/ জেডএ)