logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পুলিশকে টার্গেট: সাখাওয়াত হোসেন
০৪ নভেম্বর, ২০১৫ ১৮:৫৪:০২
image

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে আছেন ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, বিদেশী এমনকি পুলিশও।


গত ১২ দিনে দুর্বৃত্তদের চার হামলায় মারা গেছেন দুই পুলিশ ও এক প্রকাশক। সর্বশেষ হামলার ঘটনায় আজ বুধবার আশুলিয়ায় নিহত হয়েছেন একজন পুলিশ কনস্টেবল।আরেক পুলিশ সদস্য মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।


এ ধরনের হামলা কেন হচ্ছে, উত্তরণের উপায় কী, তা নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলেছে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, এসব গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিং দেশের জন্য খুবই অ্যালার্মিং। তবে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঠেকানো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।


সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।


ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি টার্গেটি কিলিং-এর ঘটনা ঘটছে। পুলিশও এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।


এম সাখাওয়াত হোসেন:  গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিং- একটি দেশের জন্য অ্যালার্মিং। এসব ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি।


ঢাকাটাইমস:  পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন গুপ্তহত্যা বন্ধ করা কঠিন।


এম সাখাওয়াত হোসেন: টার্গেট কিলিং বন্ধ করা কঠিন হলেও এটি অসম্ভব নয়। পুলিশ যেভাবে বলছে, তাতে মনে হয় যে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। তাহলে কি তারা বসে থাকবে? আর এসব ঘটনা ঘটেই যাবে?


ঢাকাটাইমস: গুপ্তহত্যা বন্ধে কী পদক্ষেপ নিতে পারে পুলিশ?


এম সাখাওয়াত হোসেন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখানে অনেক কিছু করণীয় আছে। ল এনফোর্সমেন্ট বাহিনীকেই এসব হামলা প্রতিরোধে করণীয় ঠিক করতে হবে। তাদের হামলাকারীদের জালের সন্ধান করতে হবে। তা না হলে এসব ঘটনা চলতেই থাকবে।


ঢাকাটাইমস: এসব গুপ্তহত্যা কারা করছে বলে আপনার  মনে হয়?


এম সাখাওয়াত হোসেন: পুলিশের ওপর হামলা, প্রকাশকদের ওপর হামলা- একই গ্রুপ করেছে বলে আমার মনে হয় না। প্রতিটা ঘটনার জন্য আলাদা আলাদা গ্রুপ কাজ করছে।


কারণ মাঠে অনেকগুলো দল-উপদল আছে। এদের মধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনি সরকারবিরোধী মহলও আছে। কিন্তু কারা করছে সেটি বের করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার।


ঢাকাটাইমস:  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে এসব ঘটনার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দায়ী।


এম সাখাওয়াত হোসেন: ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগেই যদি কাউকে নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া হয় যে, তারাই এসব ঘটনার জন্য দায়ী, তাহলে তো আর কিছু থাকে না। তাহলে তদন্তের প্রয়োজন নেই। শুধু ধরে বিচার করলেই তো হয়।


কারণ হত্যাকাণ্ডকে অপরাধকর্ম হিসেবেই দেখা উচিত। এসবের মধ্যে যদি রাজনীতি ঢুকে যায় তাহলে আসল অপরাধী পার পেয়ে যায়।


ঢাকাটাইমস: ইদানীং পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা করা হচ্ছে। এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?


এম সাখাওয়াত হোসেন:  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতেই পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী পুলিশকে টার্গেট করতে পারে। এটি নতুন ধরনের ঘটনা।  রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যই পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে জঙ্গিদের হামলার উদ্দেশ্যই থাকে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাষ্ট্র কতটুকু প্রস্তুত, সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়।  


ঢাকাটাইমস:  পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে।


এম সাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশে পুলিশের মূল কাজ হলো সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। কিন্তু এখন পুলিশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে। ফলে আসল কাজে মনোযোগ দিতে পারে না।


আরেকটি বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যই উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। বিশেষ করে নিচের সারির সদস্যদের খুবই বেহাল অবস্থা। উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিযে এলেও সেগুলো থিওরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে সেটি কার্যকরের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।


ঢাকাটাইমস:  হামলাকারীরা কি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে আপনার কাছে মনে হয়?


এম সাখাওয়াত হোসেন: না, সেটি আমার কাছে মনে হয় না। তবে হামলাকারীরা একটি আদর্শে বিশ্বাস করে। তারা সুপরিকল্পিতভাবে পুরনো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। বেশ কয়েকটি ঘটনায় তা-ই প্রমাণ হলো। কিন্তু তারা যে মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে, আমরা কিন্তু সেটি জানি না। আমাদের গোয়েন্দারাও কিন্তু সেটি বের করতে পারেনি। ফলে তাদের প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অগ্রিম কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই আইডিওলজিকে কিন্তু কাউন্টার আইডিওলজি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের বাহিনী কি সেটা করছে? করছে না।  


ঢাকাটাইমস: এই ধরনের ঘটনার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা দায়ী?


এম সাখাওয়াত হোসেন:  একটি রাষ্ট্রে বা সমাজে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকে তাহলে সেখানে অনেক ধরনের হুমকি কাজ করে। রাজনৈতিক সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক মহল তাদের স্বার্থ হাসিল করে। ফলে আমাদের দেশে এখন যে অবস্থা চলছে তার জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই দায়ী।


ঢাকাটাইমস: বিরাজমান সমস্যা থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী?


এম সাখাওয়াত হোসেন: বিরাজমান সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রধান কাজ রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান। কারণ রাষ্ট্র শুধু শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরাজমান সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সহযোগিতার খুবই দরকার। বিরাজমান সমস্যা সমাধান করতে হলে মানুষকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই।


কারণ সমাজের মূলধারার মানুষকে যখন জায়গা দেয়া না হয়, তখন তারা ভিন্ন পন্থায় উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। আর এ কারণে তৈরি হয় সন্ত্রাসের মতো ঘটনা। এসব মোকাবেলায় কাউন্টার ইনছারজেন্সি ও কাউন্টর টেররিজম করতে হয়। আর সেটি করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এসব করে বেশি দূর এগোনো যায় না। তাই টেররিজম ও ইনছারজেন্সির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের যোগাযোগপদ্ধতি বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানে কিন্তু যোগাযোগ পদ্ধতি হিসেবে কবুতর ও কুকুরকে ব্যবহার করা হতো।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।


এম সাখাওয়াত হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।