logo ১৪ মে ২০২৫
পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কুলিং ডাউন’ সম্পর্কে যাওয়া উচিত
০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০৮:১৯:৪২
image



পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ইতিমধ্যে দুই দেশ পরস্পরের দুই কূটনীতিককে ফিরিয়ে দিয়েছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্য ও আচরণের অভিযোগ এনে পরস্পরের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনা ঘটেছে। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তাকে আটক করার পর পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকশিনের এক কর্মকর্তা নিখোঁজ ছিলেন প্রায় ছয় ঘণ্টা।






এই পাল্টাপাল্টির মধ্যে বাংলাদেশে অনেক মহল থেকে দাবি উঠেছে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনই সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে নয়।   






আর আন্তর্জাতিক অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ যেমন বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন কুলিং ডাউন (শীতল) সম্পর্কে যাওয়া উচিত বাংলাদেশের। পাকিস্তান যেভাবে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে, সেটা কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত।






বুধবার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক মুঠোফোন সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী। 






ঢাকাটাইমস: পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে।






আশেকা ইরশাদ: আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। এ দেশের জন্মের পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, আর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এক নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশের জন্ম। স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্ক উষ্ণ থাকতে পারে না।






ঢাকাটাইমস: এত দিন সেটা দৃশ্যমান ছিল না বলে কি এখন বেশি খারাপ দেখাচ্ছে?






আশেকা ইরশাদ: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেই সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পরই মূলত পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। সর্বশেষ জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় পাকিস্তান। এরপর থেকেই সম্পর্কের তিক্ততা বৃদ্ধি ও দৃশ্যমান হতে থাক।






ঢাকাটাইমস: এর শেষ কোথায়?






আশেকা ইরশাদ: পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখাটা খুব বেশি জরুরি নয়। তবে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করাও ঠিক হবে না। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কুলিং ডাউন বা ধীরে চলো নীতিতে এগুলোই হয়।






ঢাকাটাইমস: পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে আন্তর্জাতিক  কোনো সমস্যা আছে?






আশেকা ইরশাদ: না, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে বাংলাদেশের খুব বেশি সমস্যা হবে না। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতার কারণে সম্পর্ক রাখা দরকার। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। এসব দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার অংশ হিসেবে সম্পর্ক রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।






ঢাকাটাইমস: সম্পর্ক না রাখলে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে?






আশেকা ইরশাদ: পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে দৃশ্যমান ও বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হলেও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- আন্তর্জাতিক বিশ্বে পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য প্রভাব নেই। তাদের বক্তব্য বা অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। আরেকটি বিষয় হলো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সীমান্ত নেই। তা থাকলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকত।






ঢাকাটাইমস: তাহলে আপনি সম্পর্ক ছিন্নের পক্ষে নন?






আশেকা ইরশাদ: কূটনৈতিক শিক্ষায় সম্পর্ক ছিন্নকে উৎসাহিত করে না। আমার পরামর্শ হলো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের গতি কমিয়ে বাংলাদেশ ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্য চুপচাপ থাকা যায়।






ঢাকাটাইমস: পাকিস্তানের এমন বাড়াবাড়ি কারণ কী বলে মনে করেন?






আশেকা ইরশাদ: পাকিস্তানের এমন বাড়াবাড়ি কেন সেটি আসলে স্পষ্ট নয়। কেন তারা টেনশন বাঁচিয়ে রাখতে চায় সেটি বোঝা কঠিন। তবে তাদের টেনশন বাঁচিয়ে রাখার পেছনে যে উদ্দেশ্য আছে, সেটা নিশ্চিত।






ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।






আশেকা ইরশাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।