logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
পরিচ্ছন্ন ছাত্ররাজনীতি দিয়ে দেশের পরিবর্তন চাই: প্রিন্স
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৫:০৫:১২
image



বাংলাদেশের রাজনীতি তথা অধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন একচ্ছত্র আধিপত্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। অভিযোগ আছে, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের  ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি। এ ছাড়া নিজেদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার কথা শোনা যায়। ক্যাম্পাসের নানা অপকর্মে এই সংগঠনের কোনো কোনো কর্মীর জড়ানোর খবর পত্রিকার শিরোনাম হয় মাঝে মাঝে।






ঐতিহ্য, সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও সাফল্যের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধানতম ইউনিট হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, যিনি গত বছরের ১৮ জুন এই পদে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি।






ছাত্রলীগের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলেছে এই ছাত্রনেতার সঙ্গে।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শামসুদ্দোহা






ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক হতে পেরে আপনার অনুভূতি কী?






মোতাহার হোসেন প্রিন্স: প্রথমেই বলব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। একটি দেশের জন্ম দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয়, আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার অনুভূতি বোঝানো কঠিন। আমি হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে, আমার ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের দেখভালের দায়িত্ব দেয়ার জন্য।






ঢাকাটাইমস: ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আপনার জড়ানোর গল্পটা শুনতে চাই?






প্রিন্স: ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে জাতির পিতার মহানুভবতার কথা শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র দেখতাম। সেই থেকে ধীরে ধীরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালো লাগা। স্বপ্ন দেখতাম শহীদ মিনারে ফুল দেব; স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেব। এভাবেই একটি কচি মনের ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়া। ক্লাস নাইনে থাকার সময় আমি স্কুল ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। এরপর কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য, ঢাবি জিয়া হল ছাত্রলীগের সদস্য ও একপর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক হই। আবার এখান থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মনোনয়নে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আজকের সাধারণ সম্পাদক। এভাবেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে রাজনীতির পথে আমার এগিয়ে চলা।






ঢাকাটাইমস: একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে ঢাবি ছাত্রলীগ ছাত্র-অধিকার আদায়ে কী ভূমিকা রাখছে?






প্রিন্স: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময়ই ছাত্রদের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অতীতে দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হওয়ার পর আমরা সাধারণ ছাত্রদের দাবি-দাওয়া এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ১৯ দফার একটি দাবিনামা দিয়েছি মাননীয় উপাচার্যের কাছে। এসব দাবির মধ্যে ছাত্রদের আবাসন সমস্যা, শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন উপকরণ বৃদ্ধি, খাদ্যগত সমস্যা, যাতায়াত সমস্যাসহ নানা বিষয় আছে। ধীরে ধীরে আমরা এসব কর্মসূচির সুফল পাচ্ছি। ঢাবি ছাত্ররা বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সমস্যায় পড়লে বা দুর্ঘটনার শিকার হলে আমরা সেখানে দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সহায়তার চেষ্টা করছি।






ঢাকাটাইমস: অভিযোগ করা হচ্ছে, এস এম হল ছাত্র হাফিজের মৃত্যু ছাত্রলীগের গেস্টরুম নির্যাতনের ফল।






প্রিন্স: অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি শ্রেণি এই গুজব রটাচ্ছে। হাজার হাজার ছেলে গেস্টরুম প্রোগ্রাম করছে; তাদের তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বরং কেউ কোনো কারণে অসুস্থ হলে ছাত্রলীগের ছেলেরা খুব যত্ন ও সতর্কতার সঙ্গে তার চিকিৎসার বিষয়গুলো দেখে।






ঢাকাটাইমস: ঢাবির ওপর দিয়ে মেট্রোরেলের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করতে দেখা গেছে। ঢাবি ছাত্রলীগের অবস্থান কী?






প্রিন্স: মেট্রোরেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্রদের প্রাণের দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী ছাত্রী ছিলেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। যার প্রমাণ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে দিয়েছেন। আপনারা জানেন, ঢাবির প্রায় ৪০ শতাংশ ছাত্র অনাবাসিক। আর এই তরুণ ছাত্ররা তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থেকে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ক্লাস করেন। তাই ছাত্ররা যেন তাদের মূল্যবান সময় পড়াশোনায় ও গবেষণাকর্মে নিয়োজিত থাকতে পারে এবং ঢাবির আবাসিক হলের যেসব ছাত্র ভাইয়েরা ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে টিউশনি করতে গিয়ে জ্যামের ভোগান্তিতে পড়েন,  তা থেকে তাদের উদ্ধার করতে পারে এই মেট্রোরেল।






ঢাকাটাইমস: শোনা যাচ্ছে, ছাত্রদলের পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের অনেকে  ছাত্রলীগের কমিটিতেও আছেন।






প্রিন্স: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মীদের এমনকি নেতাদের ছাত্রদল পদাধিকার দিয়েছে। এই ছাত্ররা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছে, যে দলের নেত্রী স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত শহীদদের সংখ্যা ও মহান বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, ঢাবি ছাত্র হিসেবে কখনোই সে দলের কর্মী হতে পারে না। ছাত্রদলের ঢাবি ও কেন্দ্রীয় যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে কোনো ছাত্র নেই। দলটি এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে, ছাত্রলীগ থেকে ধার নিয়ে তাদের কমিটি করতে হচ্ছে।






ঢাকাটাইমস: বিভিন্ন সময় শোনা যায়, ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের কারণে দলীয় কোন্দল হচ্ছে।






প্রিন্স: এটা প্রপাগান্ডা বলতে পারেন। আসলে ঢাবি ছাত্রলীগে কোনো কোন্দল নেই। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একই আদর্শের একই পথের পথিক। যদি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিষয়গুলো তদন্ত করছে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।






ঢাকাটাইমস: ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ ও ছাত্রস্বার্থ রক্ষার বড় প্ল্যাটফর্ম বলা হয় ছাত্র সংসদকে। অথচ ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?






প্রিন্স: ব্যক্তিগতভাবে আমিও চাই ডাকসু নির্বাচন হোক। ঢাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য মূল ভূমিকা রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। তারা যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এগিয়ে আসে, ঢাবির অপরাধবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমিও সেখানে অংশ নিতে পারব। তাই আমি ঢাবি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, আমাদের মতো ছাত্রনেতাদের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। তবে আজকে যদিও ডাকসু নেই, কিন্তু ঢাবি ছাত্রলীগ ডাকসুর ছায়া হয়ে সাধারণ ছাত্রদের পাশে আছে।






ঢাকাটাইমস: সমালোচনা করতে বলা হলে ছাত্রলীগের কোন বিষয়টি সামনে আনবেন?






প্রিন্স: আমরা ছাত্রসংগঠন করি, আমাদের সমালোচনা আপনারা করবেন। আমরা সেই সমালোচনা খণ্ডন করে নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।






ঢাকাটাইমস:  ছাত্রলীগ নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?






প্রিন্স: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি-আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তেমনি করে আগামী দিনে যেন ঢাবি ছাত্রলীগের আরো লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী এই আদর্শ মনে ধারণ করে। তারা যেন মেধা, মনন, দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ছাত্ররাজনীতি করে দেশকে পরিবর্তন করতে পারে। জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা যেন দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করতে পারে।






ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ






প্রিন্স: আপনাকেও ধন্যবাদ।