গ্রন্থ মেলা জমে উঠেছে। মাসব্যাপী এই মেলায় শেষ মুহূর্তের কেনা বেচায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা। মেলার পরিবেশ, বই বিক্রি এবং এই শিল্পের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি ঢাকাটাইমস পাঠকের জন্য-
ইউপিএলের যাত্রা কবে শুরু হয়েছিল?
ইউপিএল ১৯৭৫ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি লিমিটেড কোম্পানি রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন প্রকাশনা জগতের অবস্থা কেমন ছিল?
মোটেও ভালো ছিল না। পুস্তক প্রকাশনা ব্যবসা হিসেবে একদমই লাভজনক কিংবা আকর্ষণীয় ছিল না। তখন মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা-ই কেবল বেশকিছু বই প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। অন্যরা তেমন কিছু প্রকাশ করেননি, পাঠকের অভাব, ভালো পা-ুলিপির অভাব, বই কেনে এমন প্রতিষ্ঠানের অভাব, এ সবই বিদ্যমান ছিল।
কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
আমরা ঠিক করেছিলাম যে, একাডেমিক বইকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যান্য সৃজনশীল বই প্রকাশ করে যাব। আমাদের প্রকাশনার প্রধান ভাষা মাধ্যম হবে ইংরেজি। ওই লক্ষ সামনে রেখে অগ্রসর হতে আমাদের বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। কেননা দেশে ইংরেজিতে ভালো লেখেন এমন লেখক, সম্পাদক, প্রুফ রিডার পাওয়া বেশ কষ্টকর ছিল। এ ছাড়া বইয়ের সম্ভাব্য বা অনুমিত ক্রেতা সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল বলে আমরা এক সঙ্গে কমসংখ্যক কপি মুদ্রণ করতাম। এতে বইয়ের ইউনিটপ্রতি দাম বেশি পড়ত। ইউপিএলের বইয়ের দাম বেশি এমন অভিযোগ তাই একেবারে গোড়া থেকে।
আপনার প্রকাশনার সবচেয়ে বড় সফলতা কী?
পাঠকের আস্থা। পাঠক মনে করে ইউপিএল যখন বই ছেপেছে, নিশ্চয় এই বই ভালো। ভালো মানসম্মত বই প্রকাশনার জন্য ইউপিএলকে সবাই চেনে, এটাই ইউপিএলের অনন্য সফলতা।
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প সম্পর্কে আপনার অভিমত?
পাঠক সৃষ্টি করতে না পারলে প্রকাশনা শিল্পের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বই পড়ার অভ্যাস একেবারে স্কুল স্তর থেকে শুরু করতে হবে। দেশের মানুষের সাধারণভাবে পাঠাভ্যাস গড়ে উঠলেই কেবল এ দেশে পুস্তক প্রকাশনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। পাশাপাশি লেখকদের ভালো লিখতে হবে, প্রকাশকদের পা-ুলিপি সম্পাদনা করাতে হবে, মুদ্রাকরদের সুন্দরভাবে বই ছাপাতে হবে, বই বাঁধাইকারীদের ভালো করে বাঁধাই করতে হবে। অর্থাৎ মানসম্মত বিষয়বস্তু মানসম্মতভাবে প্রকাশিত হলে এবং দেশে পাঠক থাকলে অবশ্যই পুস্তক প্রকাশনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে দরকার সমন্বিত উদ্যোগের। সেই উদ্যোগ নিতে কাউকে দেখছি না।
তথ্যপ্রযুক্তি দিন দিন উৎকর্ষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রকাশনা শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি কাগজে ছাপা বইয়ের চাহিদা হ্রাস করবে না, বরং তাকে বাড়িয়ে দেবে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরও অল্পসময়ে ও অল্প খরচে ইড়ড়শ চৎড়সড়ঃরড়হ করা সম্ভব হবে।
বইয়ের পাঠক কমছে না বাড়ছে?
আমার কাছে এ ব্যাপরে কোনো তথ্য নেই। তবে বইয়ের বিক্রি দেখে মনে হয় না পাঠক সংখ্যায় খুব একটা বেড়েছে।
একটি সমাজের জন্য বই কেন জরুরি?
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, বিনোদন সব কিছুতেই বই থেকে উপকার পাওয়া যায়। একটি উন্নত দেশের জন্য ওহভড়ৎসবফ ঝড়পরবঃু খুবই প্রয়োজন। বই ছাড়া ওই সমাজ অসম্ভব।
প্রকাশনা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কি কোনো করণীয় আছে?
অনেক কিছুই করণীয় আছে। স্বল্প পরিসরে তা বলা সম্ভব নয়। জাতীয় গ্রন্থনীতি ১৯৯৪ সালে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা আছে। সরকার জাতীয় গ্রন্থনীতি বাস্তবায়ন করলে দেশের গ্রন্থ উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
আপনার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
পুস্তক প্রকাশনা কার্যক্রমকে আরো সংহত করা। একে আরো আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা। বইয়ের ঐধৎফ পড়ঢ়ুর পাশাপাশি ঝড়ভঃ পড়ঢ়ুর প্রকাশনা ও বিপণন চালিয়ে যাওয়া।