logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
যেকোনো ঐক্য প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই
শরিফ নুরুল আম্বিয়া
২১ মার্চ, ২০১৬ ১৬:২৯:১৭
image



ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জাসদে হঠাৎ উত্তেজনা। কেন দলে বিভেদ তৈরি, কেন নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে এভাবে আলাদা ভাগ হতে হলো এ বিষয়ে ঢাকাটাইমস-এর মুখোমুখি হয়েছেন শরিফ নুরুল আম্বিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ






জাসদের জাতীয় সম্মেলনের আগে দলে বিভেদের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তাহলে এই ভাঙন কেন, এটা কী আগের সিদ্ধান্ত, নাকি তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া?






সম্মেলনের আগে জাসদে অস্থিরতা ছিল না। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া এবং ত্রুটিপূর্ণভাবে সম্মেলন পরিচালনা করার জন্য এ অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে। সে পরিস্থিতির অবসান তাড়াতাড়ি হলে ভালো। নীতিগতভাবে জাসদ দীর্ঘদিন ধরেই সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে। এতে দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে যা গভীরভাবে ভাবলে রাজনৈতিক কিছু না। তবে দলের মধ্যে বেশকিছু অসন্তোষ রয়েছে এবং দলীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য রক্ষা করা উচিত। কিন্তু সেখানে দেখা গেছে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে যেতে বসেছি ইনুর নানা বক্তব্যের কারণে।






দলের মধ্যে বড় রকমের কোনো অসন্তোষ, অস্থিরতা কিংবা পরস্পরবিরোধী কোনো মতবাদ ছিল না যে, যার কারণে দল ভাঙতে হয়। একটা নির্বাচনে প্রার্থী হয়। প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা হয়। যদি সমঝোতা না হয় তাহলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এখানে মিছিল, স্লোগান, হইচই বা ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা নয়। এর আগের সম্মেলনেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছিল, সেখানে আমি নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এবারে সম্মেলন যেন শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য সভাপতিকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অসদ্ব্যবহার করেছেন। তখন তো আমি আর সাধারণ সম্পাদক না, কাউন্সিলর। নির্বাচনি প্রস্তাবের পর তার অনুসারীরা মঞ্চ দখল করে নিল। সভাপতির সমর্থনে কিছু লোক স্লোগান দেওয়া শুরু করল ইনু-শিরিন এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সঙ্গে। তার সমর্থিত নির্বাচন কমিশনারও ঘোষণা দিলেন ইনু-শিরিন পাস হয়ে গেছে। এরপর অনেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে সম্মেলনস্থল হতে বের হয়ে গেছে।






তারপর তো ভোটে শিরিন আখতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন?






তারপর তো ভোট হওয়ার দরকারই ছিল না। তারা তো আগেই ঘোষণা দিয়েই দিল যে শিরিন পাস হয়ে গেছে। যখন তারা দেখল এটা তো তারা নির্বাচন কমিশনে অনুমোদন করতে পারবে না, আইনগতভাবে পারবে না, তখন তারা ভোটে গেছে। পেছনের দরজা খুলে দিয়েছে সাধারণ জনগণ এবং কর্মীরা এসে ভোট দিয়েছে। কেউ কেউ দুইটাও দিয়েছে। তবে এটা ঠিক পুরো কাউন্সিলস্থলে পেছনের অংশ এটা বুঝে উঠতে পারেনি। তাই আমাদের পক্ষেরও অনেক লোক সেখানে বসেছিল। তারা কি করবে সেটা বুঝতে পারেনি। সামনে যারা বসেছিল তারা বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল। তারা সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেছে। যখন এ ঘটনা ঘটছিল তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে সভাপতিকে বলেছি, আপনি হস্তক্ষেপ করলেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি তা না করে নির্বিকার ছিলেন। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে।






হাসানুল ইনু আপনাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন?






সম্মেলনের পরিবেশ তিনি রক্ষা করেননি। মাস্তানি করা হয়েছিল। উপর থেকে মদদ দেওয়া হয়েছিল এটা স্পষ্ট ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নাজমুল হক প্রধান কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তখন সেখানে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার কোনো কারণ ছিল না। আমি আমার ব্যাগ গোছালাম। এরপর আমি দেখলাম প্রধানরা বের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু যৌথভাবে বের হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। তাই আমরা সবাই এক জায়গায় এসেছি। সেখানে তারা সভাপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করেছে যা আমি চাইওনি। যেহেতু আমি তাদের সঙ্গে আছি তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।






আপনাদের অংশের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া গঠনতান্ত্রিক হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হাসানুল হক ইনু।






মহানগর নাট্যমঞ্চে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ের প্রতিক্রিয়া এটি। আমি মনে করি, ইনুদের কর্মকা- গঠনতন্ত্রবিরোধী। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিদ্রোহ অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর বিদ্রোহ কখন গঠনতন্ত্র মেনে হয় না। গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকা-ের জন্যই বিদ্রোহ হয়।






আপনারা বলছেন হাসানুল হক ইনুর স্বেচ্ছাচারিতা এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দল থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছেন।






সম্মেলন এবং নির্বাচনি অধিবেশনে উনি (হাসানুল হক ইনু) শুধু ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। একজনকে সাধারণ সম্পাদক করার জন্য যত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে উনি এ সম্মেলনে তা ব্যবহার করছেন।






ইনু তো বলেছেন আপনাদের দল থেকে বের হয়ে যাওয়া রহস্যজনক এবং জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।






ইনুর এ বক্তব্য সস্তা। একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বড় রকমের কোনো বিভেদ আসলে এ ধরনের ধাপ্পাবাজি বক্তব্য দেওয়া হয়। এর কোনো ভিত্তি নেই। কেননা এ আন্দোলনের প্রশ্নে কাউন্সিল অধিবেশনে যে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে তাতেও এ নিয়ে বিভেদ হয়নি। সবাই এ আন্দোলনের প্রশ্নে একমত পোষণ করছে।






দায়িত্বে থাকাকালে আপনাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ তুলেছেন ইনু।






এগুলো বানোয়াট কথা। যদি ওই সময়ে কেউ গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করে থাকেন সেটা স্বয়ং সভাপতি (ইনু)। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে আমরা সে সব নিয়ে কথা বলিনি।






কোন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন?






এ সব নিয়ে আমরা এখন গণমাধ্যমে বলতে চাই না। এখন একটা ঐক্যের প্রক্রিয়া চলছে, তাই এ বিষয়ে আলোচনা করে কোনো উসকানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না আমরা।






আপনারা বলছেন, চারজন সংসদ সদস্য আছে আপনাদের সঙ্গে। কিন্তু এদের একজন লুৎফা তাহের আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করেছেন।






লুৎফা তাহের বরাবরই আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং আছেন। আজকে তিনি যে ঐক্যের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তার মধ্যেও আমরা মনে করি তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। এই ঐক্য প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয় তারপরও তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। যদি তিনি নিরপেক্ষও থাকেন তারপরও তিনি ওই পক্ষের সঙ্গে যোগ দেবেন না। যদি আমরা ধরে নেই যে আমাদের সঙ্গে আসছেন না, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদেরই থাকবে। কারণ তিনজন সংসদ সদস্য আমাদের সঙ্গে আছেন। স্থায়ী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠতাও আমাদের। 






ঐক্যের কোনো সম্ভাবনা আছে কি?






আমরা যেকোনো ঐক্য প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। তাতে আমরা সাহায্য করব। তবে মহানগর নাট্যমঞ্চের সম্মেলনকে বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সম্মেলন চাই। তার মধ্যে দিয়ে ঐক্য হতে পারে। আর সেখানে যদি সুশৃঙ্খল অধিবেশন করা যায় তাহলে ফলাফল যাই হবে সব কাউন্সিলর তা মেনে নেবে।






ঐক্য না হলে দলীয় প্রতীক (মশাল) এবং দলীয় কার্যালয় নিয়ে আপনাদের অবস্থান কি হবে?






আইনত যা হওয়ার তাই হবে। আমরা বলছি আমাদের নাম জাসদ হবে, মার্কা মশাল হবে। দলীয় কার্যালয় যেটা আছে সেটা হবে। তবে এটা আইনগতভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা মনে করি আইন আমাদের পক্ষে থাকবে।






জাসদে বারবার কেন ভাঙন হয়?






আমাদের দেশে সব দলের মধ্যে এ প্রক্রিয়া আছে। এমন কোন দল নেই যে দলে ভাঙন হয়নি। জাসদে হয়ত বা একবারের জায়গায় দুইবার বেশি হয়েছে। গত ১৫ বছর দলে কোনো ভাঙন হয়নি। যেকোনো পুরনো দলে নানা রকম ধারা, উপধারা থাকে সেরকম জাসদেও আছে। সেগুলোকে মোকাবেলা করেই এতদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু এবার একটি নির্দিষ্ট ধারা সম্মেলনে চাপ সৃষ্টি করেছিল বলেই এ ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।






এর প্রভাব কী?






যেকোনো বিভক্তিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা কষ্ট পায়। যাতে দলের বিকাশ ব্যাহত হয়। মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তা মোকাবেলা করে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। 






জাসদের গঠনতন্ত্রে ছিল দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী সভাপতি কোনো নির্বাহী দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। যদি দায়িত্ব নিতে হয় তাহলে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে দিতে হবে। এমন প্রস্তাব এবারের সম্মেলনেও এসেছিল?






এ প্রস্তাব বাতিল হয়নি। এটা আলোচনায় আছে ইনু সাহেবকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য। উনি ইচ্ছা করছেন মন্ত্রী থাকতে, কিন্তু তিনি এর অসদ্ব্যবহার করছেন।






১৪ দলীয় জোটে থাকবেন কি না?






আমরা জোটে থাকব। তবে সেটা স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক প্রয়োজনেই এই জোট আছে। বর্তমান জঙ্গিবাদবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আন্দোলনে সরকারকে সমর্থন করব। আর জোট থেকে বের হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। তবে সরকারের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে, তার গঠনমূলক সমালোচনা করব আমরা।






হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করছেন আপনাদের পক্ষ হতে জোট থেকে বের হওয়ার দাবি করা হয়েছিল।






এটা আমাদের প্রস্তাব নয়। একজন সেই বিষয়টা উত্থাপন করেছে। পরে সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু এটা পাস হয়নি। যেহেতু এখন আমাদের মধ্যে একজন এ প্রস্তাব দিয়েছিল তাই আমাদের উপর এ অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। যা ঠিক হচ্ছে না। এটা অসৎ রাজনীতি।






আপনাদের পক্ষের কাউকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে বলা হলে তা গ্রহণ করবেন?






এখানে যে কেউ মন্ত্রী হতে পারে। কারো সুযোগ হলে আমরা দ্বিমত করব না। কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গণতান্ত্রিক এ অধিবেশনকে আমরা সমর্থন করছি এবং সম্মান জানিয়ে এ কথা বলছি।






আপনি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ইনু আপনাকে অসহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ তুলছেন আপনারা।






সভাপতিসহ অনেকের মধ্যেই দলের নিয়মশৃঙ্খলাকে পাশ কাটিয়ে কাজ করার প্রবণতা ছিল। উনি দলের সাংগঠনিক প্রধান। আর সাধারণ সম্পাদক দলের নির্বাহী প্রধান। কিন্তু সেখানে তিনি তা ভঙ্গ করে নিজেই সবকিছু করতেন। তিনি সবসময় নিজের একটা উপদল সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। দলের মধ্যে নিজস্ব চিন্তাভাবনা পরিচালনা করার জন্য নিজস্ব দল গঠন করে সেখানে আশ্রয় প্রশ্রয় এবং মদদ দিয়েছেন। উনি দলের নেতা ওনার নামেই দল কিন্তু তারপরও তিনি দলের মধ্যে উপদল করার জন্য বেশি সময় ও পদক্ষেপ নেন।