logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
নিজের শিশুর যত্ন করছি, অন্যের শিশুকে অবহেলা
১১ মার্চ, ২০১৬ ১১:২৪:৫১
image



জিয়া রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক। একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনায় দেশের অন্য সব মানুষের মতো উদ্বিগ্ন তিনিও। কোন মনস্তত্ত্ব থেকে প্রতিরোধের ক্ষমতাহীন শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে, এ থেকে উত্তরণের উপায় কী-এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই বিশেষজ্ঞ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শামসুদ্দোহা মৃধা।






ঢাকা টাইমস: শিশুদের তো শত্রু থাকার কথা না, তারা কেন হত্যার স্বীকার হচ্ছে?






জিয়া রহমান: শিশু হত্যা বৃদ্ধির মত এক স্পর্শকাতর বিষয়টি মূলত একটা সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশের সামাজিক ব্যাবস্থায় কিছু অসঙ্গতি থেকে সমস্যাটা প্রকট হয়েছে। গতকয়েক বছরে অল্প সময়ের মধ্যে সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে নানা অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। এই অসঙ্গতির উপসর্গ হল শিশুদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি।






আরেকটা ব্যাপার হল ঔপনিবেশিক কাল থেকে আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ন্যায়বিচার ছিল না। জমিদারদের সময় থেকে দরিদ্র ও দুর্বল লোকদের মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করা হত না। সেই সামন্ততান্ত্রিক মনভাব থেকেই আমরা আমাদের সন্তানদেরকে হয়তো ভালমত মানুষ করছি, কিন্তু আমাদের বাসায় যে ছেলে বা মেয়ে কাজ করে তাকে আমরা ভৃত্যের মত গণ্য করছি। সেও যে মানুষ, তারও  যে অধিকার আছে, সেটি কখনই অনুভব করছি না। এর ফলেই শিশু নির্যাতিত হচ্ছে। গরম খুন্তি দিয়ে ঝলসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।






ঢাকা টাইমস: খুনি হিসেবে মায়ের নামও এসেছে একটি ঘটনায়...






জিয়া রহমান: সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এটা বোঝা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনটি ঘটছে অবৈধ বা অনিয়ন্ত্রিত সম্পর্কের কারণে।






সামাজিক পরিবর্তনের কারণে বিদেশি সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে। ফেসবুক, মোবাইল, মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক আকাশ সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিন্তু বিদেশি সংস্কৃতি যখন গ্রহণ করা হয়, তখন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়। এটাকে কালচারাল ল্যাগ বলে। আমাদের সমাজে কালচারাল ল্যাগটা তৈরি হচ্ছে এভাবে যে, পশ্চিমা অনুকরণে আমরা অবাধ মেলামেশাকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করেছি। কিন্তু নিরাপদ মেলামেশার জন্য যথেষ্ট সচেতনতা আমাদের নেই। আমাদের সমাজেরই একটা বিরাট অংশ আবার একে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এই সামাজিক অসঙ্গতির বলি হচ্ছে বিবাহ- বহির্ভূত সম্পর্কের দ্বারা জন্ম নেয়া শিশুরা।






ঢাকা টাইমস: শিশু হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তো আতঙ্ক ছড়িয়েছ...






জিয়া রহমান: বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশে এখনও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নি যে, শিশুরা এখানে বসবাস করতে অসুবিধার সম্মুখীন হবে।






তাছাড়া শিক্ষার হার যেভাবে বাড়ছে, গ্লোবালাইজেশন যেভাবে দ্রুত হচ্ছে অর্থাৎ যেভাবে সামাজিক পরিবর্তন  তরান্বিত হচ্ছে, সে হিসাবে কালচারাল ল্যাগটা এক সময় কমে যাবে। তবে সময় লাগবে। আর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের জায়গাটা বিস্তৃত হওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের সংবাদ বার বার প্রচারিত হওয়ায় মানুষ সম্প্রসারিত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। অতএব সমস্যার সমাধান আসন্ন।






ঢাকা টাইমস: এই অবস্থা থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী?






জিয়া রহমান:  আমি আগেই বলেছি এটা একটা সামাজিক অসঙ্গতি থেকে উদ্ভুত সাময়িক পরিস্থিতি। সামাজিক পরিবর্তনের এ পর্যায়ে এসে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই এসব অসঙ্গতি গুলোও দূর হয়ে যায়। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, সুশিক্ষা, সুশাসন ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে অবশ্যম্ভাবী ক্ষতি সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে পারি।






ঢাকা টাইমস: বিশেষ করে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য ঢাকা শহর কি উপযুক্ত?






জিয়া রহমান: বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনের পটভূমি যেহেতু ঢাকায় রচিত হয়, আর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবটাও যেহেতু ঢাকায় আগে পরে, সেহেতু ঢাকার সামাজিক অসঙ্গতিটা একটু বেশি। এছাড়াও অবস্থানগত ও কাঠামোগত কারণে ঢাকায় শিশুদের বসবাসে তুলনামূলক বেশি ঝুঁকি রয়েছে।






ঢাকা টাইমস: ঢাকায় স্বামী-স্ত্রী যার যার মত করে ব্যস্ত। সন্তানরা বেড়ে উঠছে একা একা বা গৃহকর্মীর কাছে। এটা কি একটা সমস্যা?






জিয়া রহমান: এ ক্ষেত্রে শিশুদের নিরাপত্তাগত দিকটাতে একটা ঝুঁকি রয়ে যায়। শিশুদের বেড়ে ওঠার  সময়টাতে নানা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আবার বাবা মায়ের সান্নিধ্য কম পাওয়ায় শিশুর মানসিক বিকাশেও সমস্যা হতে পারে।



ঢাকা টাইমস: আজকাল যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে। এসব তো শিশুদের অপর প্রভাব পড়ছে।






জিয়া রহমান: আমরা যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারের দিকে যাচ্ছি। পরিবারের চেয়ে বাইরের মানুষকে নিয়েই একটা বড় সময় কাটাতে হচ্ছে। শিশুদের ছোট থেকে যেসব বিষয়ে সচেতন করা বা শেখানোর সময়টা এটা কিন্তু সে পাচ্ছে না। একই সঙ্গে পরিবারের বিচ্ছিন্নতা একে অপরের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রত্যক্ষদর্শীও শিশুরা, যার ফলে এই সব দিকগুলোর একটা নেতিবাচক প্রভাব তো পড়ছেই। বড়দের দেখে শিশুরা শেখে। এক্ষত্রে শিশুদেরকে পারিবারিক, সামাজিক জটিলতা থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি।






ঢাকা টাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।  






জিয়া রহমান: ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।