জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল আর সরকার পতনের আন্দোলনে দুই দফা ব্যর্থতার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব এলাকায় প্রার্থীও দিতে পারেনি দল। সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের কাজও আগায়নি সেভাবে। এই অবস্থায় হচ্ছে জাতীয় সম্মেলন। দলের শীর্ষ দুই নেতা অবশ্য আগেই নির্বাচিত হয়ে গেছেন। সম্মেলনের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মহাসচিব পদে নির্বাচন। এই পদের জন্য বেশ কয়েকজন দাবিদার থাকলেও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই এই পদ পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহসভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ। ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
বিএনপির এই নেতার আশা, কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আবার সংগঠিত হয়ে ঘুরে দাঁড়াবে এবং নতুন করে আন্দোলনে নামবে বিএনপি। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, এবার আন্দোলনে রাজধানীতে কর্মসূচি পালনের ওপর জোর দেয়া হবে। তার মতে, দুই দফায় সারা দেশে আন্দোলন হলেও রাজধানীতে সেভাবে প্রভাব না পড়ায় ব্যর্থ হতে হয়েছে বিএনপিকে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ঢাকা ঢাকাটাইমসের পক্ষে ছিলেন বোরহান উদ্দিন।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে আর তো কোনো সংশয় নেই...
হাফিজ উদ্দিন: সরকার শেষ পর্যন্ত ভেন্যুর অনুমতি দিয়েছে। আমাদেরও প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। আশা করি সব শঙ্কা কাটিয়ে আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিল করতে পারবো। আমরা এজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।
ঢাকাটাইমস: তদবির করে কাউন্সিলে দলে পদ নেয়ার অভিযোগ আসছে। এমন অভিযোগ কেন উঠেছে?
হাফিজ উদ্দিন: কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উজ্জ্বীবিত। বড় দলে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সবার প্রত্যাশা যারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন, ত্যাগীরা স্থান পাবে। দল তেমন চিন্তাই করছে। এবার তদবিরে পদ মিলবে না।
ঢাকাটাইমস: খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর থেকে বিএনপিতে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নেই। এই পদের জন্য বেশ কয়েকজন নেতার নাম এসেছে। কার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
হাফিজ উদ্দিন: যতটুকু মনে হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হবেন। এখানে নতুন মুখ আসবে বলে আমার জানা নেই।
ঢাকাটাইমস: কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সংস্কারবাদী নেতারা দলে ফিরছেন এমন খবরের সত্যতা আছে কী?
হাফিজ উদ্দিন: বিষয়টি ঠিক আমি জানি না। এদের মধ্যে অনেকেই তো সাবেক সংসদ সদস্য। আগে এমন একটা গুঞ্জন ছিল কিন্তু শিগগির এমন কোনো আলামত দেখছি না।
ঢাকাটাইমস: কাউন্সিলের পর আন্দোলনের কথা শোনা যাচ্ছে। কোন ধরণের আন্দোলনে যাবে বিএনপি?
হাফিজ উদ্দিন: বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গণতন্ত্র নির্বাসিত। সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সব জায়গায় চলছে লুটপাট। ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে। এমন অবস্থায় আন্দোলন ছাড়া তো কোনো বিকল্প খেলা নেই। তাই কাউন্সিলের পর বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দু:সহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দেবে। এবং সে আন্দোলন হবে অহিংস। তবে সরকার বাধা দিলে তা সহিংস রূপ নিতে পারে।
ঢাকাটাইমস: এবারের আন্দোলনের ধরণ পাল্টাবে কী?
হাফিজ উদ্দিন: দুই দফায় সারাদেশে তুমুল আন্দোলন হয়েছে। তবে ঢাকাতে সেভাবে আন্দোলন হয়নি। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা। তবে কাউন্সিলের পর বিএনপির ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস। সেক্ষেত্রে সরকারকে বিদায় করতে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন হবে। আন্দোলনের ধরণ না পাল্টালেও অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে।
ঢাকাটাইমস: আপনার দৃষ্টিতে বিএনপির ভুল কী?
হাফিজ উদ্দিন: আমাদের বড় ভুল হলো আওয়ামী লীগের মনোভাব বুঝতে না পারা। কারণ বিএনপির যতটা গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ ততটাই অগণতান্ত্রিক। আমরা যতই গণতন্ত্রের পথে হাটি, তাতে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
ঢাকাটাইমস: আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলবেন কি?
যেমন ধরুন, ক্ষমতায় থাকার সময় উচ্চ আদালতে বিচারকের পদ শূন্য ছিল। কিন্তু যোগ্য লোক না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে আমরা সেসব পদ পূরণ করিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিয়েছে।
আর একটি ভুল অনেকেই স্বীকার করেছেন তা হলো- ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে চলা আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া। ওই সময় আন্দোলন চালিয়ে গেলে সরকার জনগণের দাবি মেনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হতো।
ঢাকাটাইমস: কিন্তু ওই নির্বাচন বর্জন করা ভুল ছিল, এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ। এমনকি বিএনপির ভেতরেও কারও কারও একই ধরনের মত আছে।
হাফিজ উদ্দিন: আমি তা মনে করি না। নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগ কারচুপি করে আমাদেরকে জোর করে হারাতো। বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের পরও বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। যদিও শুরু থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা বলছেন নেতারা।
হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। প্রার্থীদের কেউ কেউ মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছেন। যারা টিকে আছেন তারাও ইউনিয়নে যেতে পারছেন না। আমি ছয়বারের সংসদ সদস্য হয়েও এলাকায় যেতে পারি না। এই নির্বাচনেও প্রশাসনের সহযোগিতায় সব জায়গা সরকারি দলের লোকজন দখল করে ফেলেছে। আসলে সরকার কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না।