logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
নৈতিক শিক্ষার অভাবে অপরাধ বাড়ছে
০১ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:৪২:৫৯
image



সমাজ ও পরিবারে নৈতিক শিক্ষা ও এর অনুশীলন নেই বলে মানুষ হয়ে উঠছে অপরাধপ্রবণ। ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া অপরাধ কমানোর পথে বড় বাধা। সমাজে অপরাধ কমাতে নৈতিক শিক্ষার যেমন বিকল্প নেই, তেমনি বিচার-প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এবং সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি। এমনকি তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ারও শাস্তি হওয়া দরকার। বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা হোসেন।






অতিসম্প্রতি সংঘটিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা নিয়ে দেশ এখন উত্তাল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নারীর ওপর হামলা, ধর্ষণ, শিশু হত্যাসহ সমাজে খুনোখুনির ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব নিয়ে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে কথা হয় মনোবিজ্ঞানী ড. আফরোজা হোসেনের সঙ্গে। শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী






ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে।






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: একটি সমাজ তখনই অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে, যখন ওই সমাজে নৈতিক শিক্ষা থাকে না। অথবা নৈতিক শিক্ষা থাকলেও সেটির অনুশীলন হয় না। আমাদের সমাজে দৃশ্যত নৈতিক শিক্ষার অনুশীলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ।






ঢাকাটাইমস: নৈতিক শিক্ষা অনুশীলনের উপায় কী?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: নৈতিক শিক্ষা অনুশীলনের উপায় হলো- ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটি শুরু করতে হবে বড়দের। শিক্ষা দিতে হবে পরিবারে শিশুদের। পর্যায়ক্রমে এটি সমাজে ছড়াবে। এভাবে একদিন সমাজ অপরাধমুক্ত হবে।  






ঢাকাটাইমস: আমাদের সমাজে কি নৈতিক শিক্ষা একেবারেই নেই?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: এটি এক কথায় বলা মুশকিল। আমরা যখন ছোট ছিলাম তথন পড়তাম ‘অ- অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর’ ইত্যাদি। কিন্তু এখন কি শিশুপাঠ্যতে এসব আছে? আগে আমরা মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা বই পড়তাম। এখন কিন্তু সেগুলো নেই। শিশুপাঠ্যতে নৈতিক শিক্ষাটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।     






ঢাকাটাইমস: কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টে তনু হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে।






ড. আফরোজা হোসেন: দেখুন ক্যান্টনমেন্ট কিন্তু খুবই সুরক্ষিত জায়গা। সেখানে কিন্তু এ রকম খুন হওয়ার সুযোগ নেই। আর তারা হলো শৃঙ্খলা (ডিসিপ্লিনড) বাহিনী। তাদের দিয়ে এটি ঘটেনি। তবে কেউ বাইরে থেকে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। আর সেটাই যদি হয়, তাহলে তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। না হলে এত বড় সুরক্ষিত জায়গায় বাইরে থেকে এসে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল!






ঢাকাটাইমস: তনুর বিচার নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: মামলাটি এখন সিআইডি তদন্ত করছে। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তবে মামলার তদন্ত যেন কোনোভাবে প্রভাবিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। অনেক সময় সাক্ষ্য-প্রমাণে ঘাটতি রাখা হয়, সেটি যেন না হয়। যদি কেউ তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে বা বিচার বাধাগ্রস্ত করতে এমন কিছু করে থাকে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা দরকার। তনু হত্যার বিচারটি যদি সঠিকভাবে আমরা পাই, তাহলে এ রকম অপরাধ অন্যরা করতে ভয় পাবে। অপরাধীরা মনে করবে, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। ফলে অপরাধ কমে যাবে। দেশবাসী বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে রক্ষা পাবে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার সঠিকভাবে হওয়া উচিত। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই দেশের মানুষ শান্তি পাবে। 






ঢাকাটাইমস: তনুরা প্রায়ই এমন ঘটনার শিকার হয়। কেন?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছোটবেলা থেকেই মনে করা হয় পুরুষ হলো নারী থেকে বেশি শক্তিশালী। তারা সব সময়ই পুরুষদের দ্বারা শাষিত হবে। পুরুষ যেমন চাইবে নারী তেমনই করবে। এই ধারণা থেকেই পুরুষ মনে করে তারা খুবই পাওয়ারফুল। নারীর প্রাপ্য অধিকার নিয়ে সে ভাবে না। সে খোঁজে না তার এই শক্তির উৎস কোথায়। আর তাদের এই অহমিকাই এ ধরনের অপরাধের মূল কারণ।






ঢাকাটাইমস: এমন ঘটনা বারবার ঘটছে কেন?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: বিচারহীনতার কারণে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। অপরাধী যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় তাহলে কিন্তু অপরাধ কমে যায়। আমাদের বিচারব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। দ্রুত বিচার এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হলে অপরাধ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। এই জায়গাটায় বড় পরিবর্তন জরুরি।  






ঢাকাটাইমস: এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: মানুষের মধ্যে ভোগের মানসিকতা বেড়ে গেছে। সবাই শুধু ভোগ করতে চায়। কেউ ত্যাগ করতে চায় না। তাই ভোগের মানসিকতা ছাড়তে হবে।দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ’ মন্ত্র নিয়ে এগুতে হবে। সবাইকে ইতিবাচক ধ্যান-ধারণার অধিকারী হতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করলেই হবে না, সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে এই ধরনের অপরাধ কমে যাবে।






ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।






অধ্যাপক আফরোজা হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।






(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/মোআ)