ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত। নতুন দায়িত্ব কীভাবে সামলাবেন, নিজের ব্যবসা সামলে সংগঠন চালাবেন কী করে, দল পরিচালনায় কর্মপরিকল্পনাই বা কী হবে, বাদ পড়া আর নতুন সুযোগ পাওয়া নেতাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করবেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই।আলাপচারিতায় আবুল হাসনাত জানিয়েছেন তার কর্মপন্থা আর রাজনৈতিক দর্শনের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ
থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে এখন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন। এত বড় দায়িত্ব, একে সুযোগ হিসেবে দেখছেন নাকি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন?
আগের দায়িত্বে আমি ছিলাম ২৪ বছর। দুই যুগ ধরে টানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার দুটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছে। এক-এগারোর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে বিরুদ্ধ পরিবেশেও রাজপথে সক্রিয় থাকতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নানা সময় ধরে রাজপথে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। কীভাবে রাজনৈতিক কর্মীদের এক সঙ্গে চালাতে হয়, নানা চিন্তাধারা আর মত-পথের নেতা-কর্মীদের কীভাবে একটি লক্ষ্যের দিকে চালিত করতে হয় সে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। এখন নেত্রী আমাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে আমাকে আগের চেয়েও বেশি কর্মতৎপরতা দেখাতে হবে। নতুন-পুরনোদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, নেত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তা যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারব।
মহানগরের নতুন কমিটি নিয়ে দলে বিভেদের কথা শোনা যাচ্ছে।
যাদের নতুন পদে রাখা হয়েছে তারা মাঠের ত্যাগী নেতা। আগের কমিটির অনেকেই নতুন কমিটিতেও স্থান পেয়েছে। তাই বিভেদের তথ্য সত্য নয়।
যারা প্রাথমিক কমিটিতে স্থান পাননি, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা সব সময় পদ পদবি পাওয়ার অধিকার রাখেন। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের ভালো জায়গায় রাখা হবে।
দলীয় কোন্দল সামাল দেবেন কীভাবে?
আমি স্পষ্টত বলতে চাই, আওয়ামী লীগে কোন্দল করে কোনো লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই কমিটি গঠন করেছেন। পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কমিটিও তার অনুমতি নিয়েই গঠন করা হবে। তাই দলের ভেতর ঝামেলা করে লাভ হবে না। আমাদের মধ্যে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা আছে, থাকবেও। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত লাভ বা রেষারেষি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নতুন কমিটিতে তরুণদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আওয়ামী লীগের কর্মীর অভাব নেই। কিন্তু মহানগর কমিটিতে নেতৃত্বে পদ আছে ৭১টি। এসব পদে তরুণরাও স্থান পাবে। যারা ত্যাগী, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছে তাদের আমরা অবশ্যই মূল্যায়ন করব।
কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে?
অচিরেই আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করব। নেত্রী আমাদের বলেছেন, কিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই আলাপ আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির করার কাজ শুরু করব।
মহানগর কমিটি গঠনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ডেকেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল তিন থেকে চার মিনিট। তিনি আমাকে একটা কথাই বলেছেন যে, তিনি পুরান ঢাকার একজনকে দক্ষিণের সভাপতি করতে চান। কিন্তু আমাকে এমনভাবে বলেননি যে, আপনাকেই সভাপতি করবেন।
আপনি তো ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতি করবেন নাকি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করবেন?
আমি ২৫ বছর লালবাগ থানার দায়িত্বে আছি। ব্যবসা তো আমার পেশা আর রাজনীতি আমার নেশা। সভাপতি হওয়ার আগে তো আমি অন্যান্য পদে ছিলাম। কাজেই হঠাৎ করে তো আমি রাজনীতিতে এসে কোনো পদ পেয়ে যাইনি। দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা আমার আছে।
ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করা নিয়ে তো অনেক কথা হয়। নানা সময় তারা রাজনীতিকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ আছে।
ব্যবসার জন্য আমি রাজনীতির ক্ষতি করিনি, একইভাবে রাজনীতির জন্য ব্যবসার ক্ষতি করিনি। রাজনীতিকে ব্যবহার করে ব্যবসাও করতে চাইনি কখনো। কখনো করবও না।
আমি মনে করি, রাজনীতিবিদদের ব্যবসা-বাণিজ্য থাকা প্রয়োজন। তা না হলে তারা খাবে কী? যদি শুধু রাজনীতিই করেন তাহলে তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বেন। কাজেই যারা ব্যবসা এবং রাজনীতি দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যান, তাদের আমি ভালো মনে করি। ব্যবসায়ী হওয়ার পরও যদি তার রাজনীতি করার যোগ্যতা থাকে তাহলে তাকে সুযোগ দিতে হবে।