ঢাকা: চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৬ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার। একইসাথে রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।
অন্যদিকে, একক মাস হিসেবে সর্বশেষ মে মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ২২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। আর গত বছর একই সময়ে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৮১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
অন্যদিকে, মে মাসে আয় হয়েছে ৩০২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১১ কোটি ডলার। গত বছর মে মাসে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৮৪ কোটি ১১ লাখ ডলার।
প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের ধারাবাহিক ভালো আয় হওয়ায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাকনির্ভর। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছেই। এ কারণেই রপ্তানি আয়ে উল্লেখ করার মতো প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে।
তিনি রপ্তানি আয় আরও বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও অনেক নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পোশাকের পাশাপাশি অন্য পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে পোশাক খাত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় নেতিবাচক। এজন্য তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করেন।
তিনি রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের ওপর আরোপিত উৎসে কর হ্রাসের সুপারিশ করেন।
ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পোশাক খাতের ওভেন পণ্যে (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় দুই-ই বেড়েছে। এক হাজার ২৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ বেড়ে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
পোশাক খাতের নিট পণ্যেও (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কিছুটা কম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১৯৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, আর আয় হয়েছে এক হাজার ১৯২ কোটি ডলার।
আলোচ্য সময়ে বড় পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, বড় পণ্য হিসেবে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি এমন পণ্যের মধ্যে হিমায়িত মাছের প্রবৃদ্ধি কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। চিংড়ির প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। এছাড়া হোম টেক্সটাইল, সিরামিকস, কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদির রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে এবং একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রাবার, কম্পিউটার এক্সেসরিস, ফার্নিচার, শুকনো খাবার, রাসায়নিক পণ্য প্রভৃতি।–বাসস
(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/জেবি)