টাঙ্গাইল : মলি, প্রশান্ত, জবা। মলি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। জবা দ্বিতীয় আর প্রশান্ত ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে। একই বয়সের ওরা ছয়জন। যে বয়সে পড়ালেখার ফাঁকে খেলাধুলা করার কথা, সময়ের প্রয়োজনে সেই বয়সে ওরা ফুলের মালাবিক্রেতা। স্কুলের ক্লাসের সময় ছাড়া বাকি সময়টুকু ওদের ব্যস্ত থাকতে হয়- ফুল কুঁড়ানো, মালা গাঁথা আর মানুষের ধারে ধারে সেই মালা বিক্রি নিয়ে।
শহরে দেখা মেলল এরকম কয়েকজন শিশু ফুলের মালা বিক্রির জন্য মানষের পিছু ছুটতে। ভদ্রবেসের মানুষ দেখলেই বলছে, ভাই একটা মালা নিন, ও ভাই নিন না একটা মালা। মাত্র ১০ টাকা। এভাবে ওদের মতো কোমলমতি অনেক শিশুই পুরো শহরজুড়ে ফুল বিক্রি করছে।
শহরের শহীদ মিনারের সামনে ছয় শিশুর সাথে কথা বলে জানা গেল, শিশু বয়সে কেন তারা ফুল বিক্রি করছে। এই ৬ জনের মধ্যে ৩ জনেই ভাই-বোন। তাদের সবার বাসা টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ডে। তারা সকলেই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া করে। বাবার অল্প আয়ে সংসার চলে না। তাদের পড়ালেখার খরচও দিতে পারে না মা-বাবা। তাই এসব শিশু তাদের পড়ালেখার খরচ জোগাতেই ফুল বিক্রি করছে। কেউ কেউ পড়ালেখার খরচ চালিয়ে বাবাকেও সাহায্য করছে ফুল বিক্রি করে।
এসব শিশু ভোরে বের হয় ফুল কুঁড়াতে। সময় হলেই তারা স্কুলে যায়। স্কুল শেষ হলেই বেরিয়ে পড়ে ফুল নিয়ে। এখন বকুল ফুলের মৌসুম। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বকুল ফুলের মালা বিক্রি করে। যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে, সেদিন সকালেই ফুল বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ে।
ফুলবিক্রেতা শিশু মলি বলে, আমি তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করি। আমাদের স্কুল যখন ছুটি হয় তখন আমরা ফুল বিক্রি করি। আর যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে, সেদিন সকাল থেকে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফুল বিক্রি করি। আমি প্রতিদিন প্রায় ২০টি মালা বিক্রি করতে পারি। আমার বাবা ডিম বিক্রি করে। বাবার পাশাপাশি আমি ফুলের মালা বিক্রি করে সংসারের জন্য কিছু অর্থ উপাজন করি।
একইভাবে শান্তা, অঞ্জনা, প্রশান্ত জবা জয়ন্ত ওরা সবাই ফুল বা ফুলের মালা বিক্রি করে নিজে পড়ালেখা করছে। দরিদ্র মা বাবাকে একটু অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে এসব শিশুরা।
পরনির্ভর বা অপরাধমূলক কর্মকা-ে না জড়িয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পড়ালেখায় আঁকড়ে থাকায় তাদের সাধুবাদ জানায় সাধারণ মানুষ।
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুন/প্রতিনিধি/এলএ)