logo ০৭ জুলাই ২০২৫
ঈদের জামায় উজ্জ্বল মজার ইশকুলের পথশিশুরা
শামসুদ্দোহা
২২ জুন, ২০১৬ ০৯:১০:৪১
image



ঢাকা: বিকেল তখনো গড়ায়নি। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট হয়ে খানিকটা ভেতরে ঢুকতেই একঝাঁক শিশুর কলরব কানে এল আমাদের। খানিক এগোতেই দেখা গেল মাঝারি একটা ছাউনিতে পাঁচ যুবক ৭০-৮০ জন পথশিশুকে পড়াচ্ছেন।






কাছে গিয়ে বোঝা গেল তখন এই ‘মজার ইশকুল’-এ কোনো পুঁথিগত পাঠদান হচ্ছে না। কোনো এক কারণে সবার মধ্যে আনন্দ কোলাহল।    






কয়েক শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের আনন্দের উপলক্ষ। তাই আর দশটি দিনের সঙ্গে আজকের দিনটিকে এক করতে চাইছে না এই ছোট পথশিশুরা। আজ তাদের কেবল হাসি আর উড়তে পারার উচ্ছ্বাস। দিন গড়িয়ে রাত পোহালেই তাদের হাতে উঠবে ঈদের নতুন জামা। সে জন্য ক্লাস শেষে শিশুদের নাম-পরিচয় লিখে নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা।






ঈদের নতুন জামা পাওয়ার অনাগত আনন্দের ছটা ছড়িয়ে আছে পথশিশু শাকিলের চোখেমুখে। নতুন জামা পেলে কেমন লাগবে- জানতে চাইলে হাসির ফুলকি ছড়িয়ে অস্পষ্ট বাক্যে দ্রুত বলে যায়, “অন্নেক ভাল্লাগতাসে। আপা-ভাইয়ারা বেকবার (প্রতিবার) ঈদে আমাগো জামা দেয়।”






শুধু কি জামা দেয়? শাকিল বলে, “জামা দেয়, খাওয়ায়, আমাগো লেখাপড়া করায়। আমাগো লগে খেলে। নাটক, গান, ছবি দেহায়...(একমুখ হাসি)।”






শুধু শাকিল নয়, তার মতো রবিন, ইমন, আলামিন, সুজন, সাদ্দাম, রাকিবসহ ৮৩ পথশিশুর আনন্দ এমনই অপরিমেয়।






প্রতিবছরের মতো চলতি ১৮-২২ রমজানের মধ্যে চতুর্থবারের মতো ৪০০ পথশিশুকে ঈদের নতুন পোশাক পথশিশুদের হাতে তুলে দেয়ার কর্মপরিকল্পনার অংশ আজকের এই ক্লাস।






পথশিশুদের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী জাকিয়া সুলতানা বলেন, “পথশিশুদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি পয়েন্টে কাজ চলছে। ছেলেদের জন্য শার্ট, প্যান্ট ও বেল্ট। মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।”






জাকিয়া সুলতানা, রত্না বিশ্বাস, আমানুল্লাহ, সাখাওয়াত হোসেন, মহুয়া দত্ত, সৈয়দা তাশফিয়া, ঝুমা সরকারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে এভাবেই দেখভাল করছেন হাজার খানেক পথশিশুকে। 






শাহবাগসহ ঢাকার পাঁচটি পয়েন্টে পথশিশুদের অভিভাবকসম ছায়া হয়ে তাদের পাশে থাকছেন ‘মজার ইশকুলের’ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, আগারগাঁও বস্তি এবং মালিবাগসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কার্যক্রম চলছে তাদের। নিয়মিত দুই শতাধিকসহ প্রায় ১ হাজার পথশিশুর আস্থা আর ভরসার জায়গা মজার ইশকুল।






মাত্র ১৩ জন পথশিশুকে নিয়ে মজার ইশকুলের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি। সরকারি অনুমোদন পাওয়া স্কুলটি প্রতিটি পথশিশুর জন্য শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপদ বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।






মজার ইশকুল বছরের বিভিন্ন সময় পথশিশুদের নিয়ে নানা সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। চলতি জুন মাসের ৫ তারিখ ফল উৎসব উদযাপন করেছে তারা। শীতবস্ত্র বিতরণ, আনন্দ উৎসব, ক্রীড়া উৎসবসহ গত তিন বছরে সংগঠনটির নানা মানবিক উদ্যোগ দৃষ্টি কেড়েছে সবার।






সংগঠনটির উদ্যোক্তা আরিয়ান আরিফ ভবিষ্যতেও পথশিশুদের নিয়ে তাদের কাজ এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “স্বাবলম্বী ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে পরম মমতায় বন্ধুর মতো পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা, মাদক থেকে দূরে রাখা, যাদের পারিবারিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার মতো তাদের ফিরতে সহযোগিতা করা, আর যাদের ফেরার কোনো অবস্থান নেই তাদের আবাসিক শেল্টার হোমে রেখে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের লক্ষ্য।”






আরিয়ান আরিফ আরও বলেন, “প্রতিটি শিশু যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এমন কর্মমুখী শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা করছি।”






(ঢাকাটাইমস/২২জুন/মোআ)