ঢাকা: প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যেই আমাদের এই বাজেট।অতীতে এত বড় বাজেট আর দেয়া হয়নি।সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এটা পরনির্ভরশীল বাজেট নয়।এবার ৭.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি আর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আমরা আশা করছি তা অর্জন করতে পারবো।প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় রপ্তানি খাতে উৎসে কর দশমিক ৭ ভাগ করার সুপারিশ করেছেন।
সেই সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাজেট প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসে করসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব সংশোধনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
প্রথা অনুযায়ী, সমাপনী বক্তব্য দিতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরে প্রধানমন্ত্রীর এসব সুপারিশ বাজেট প্রস্তাবে গ্রহণ করেন। সমাপনী বক্তব্যের পর তিনি ২০১৬ সালের সংশোধিত অর্থবিল পাসের জন্য সংসদে তুলবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের সমাপনী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে প্রতি বছরই দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে আরো ১০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা আমাদের রয়েছে এবং সে লক্ষে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সংসদ নেত্রী বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।এর ফলে আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও আমাদের বিনিয়োগ বেড়েছে। আমাদের অর্থনীতি এখন শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। রিজার্ভ প্রতিবছরই বাড়ছে। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত খেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে।মানুষ অর্থনৈতিকভাবে এখন যথেষ্ট স্বচ্ছলতা অর্জন করেছে। বিভিন্ন উৎসবে তার প্রমাণও মিলছে।তাছাড়া বিভিন্ন সূচকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।আগামীতে আরও এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতে উৎপাদনেও বিশাল সাফল্য আমরা অর্জন করেছি। গত কয়েক বছরের নিরলস প্রচেষ্টার পর ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা পরমানু বিদ্যুৎ নির্মাণ করতে যাচ্ছি। চেরনোবিলের মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা এখন আর নেই।এখন অনেক আধুনিক হয়েছে।
পরমানু বর্জ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পরমানু প্রকল্পে বর্জ রাশিয়া তার দেশে নিয়ে যাবে, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। কাজেই এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী বাজেট নিয়ে তাঁর বক্তৃতায় রামপাল নিয়েও কথা বলেন, রামপাল নিয়ে দুশ্চিতার কারণ নেই।পরিবেশ দুষণের কোনো ক্ষতির আশংকা নেই এই প্রকল্প হতে।আমার কাছে এটা বোধগম্য নয় যে কী কারণে রামপাল নিয়ে এত হৈ-চৈ করা হচ্ছে।সুন্দরবন নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। হলে তা আমরা তা করতাম না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের সমস্যা আমাদের রয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য গ্যাস আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। একের পর এক ফ্লাইওভার হচ্ছে, মহাসড়কগুলো চার লেনের উন্নীত হচ্ছে।রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হচ্ছে।পাতাল রেল ও ইলেকট্রিক ট্রেনও আমরা নির্মাণ করে দেব।স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। যার কারণে আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। যার কারণে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে।সামাজিক নিরাপত্তায় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে।আগামীতে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সামাজিক উন্নয়নের বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ফেরা কর্মসূচির মাধ্যমে নগরীর বস্তিবাসীদের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।গরিব নারীদের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকও আমরা করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াস সফল হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেত্রী বলেন, এ নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। একে আরো গতিশীল করতে প্রতিটি বিভাগে আইটি পার্ক গড়ে তোলা হবে। পবিত্র কোরআন শরীফও আমরা ডিজিটাল করে দিয়েছি।
শিক্ষা খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।যে সব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই তার তালিকা করা হয়েছে।প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি কলেজ করে দেয়া হবে।
আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও পুঁজি বাজার নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী একটি পুঁজিবাজার চাই। এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজি বাজারে দুর্নীতি নিয়ে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবেশি দেশের পুঁজি বাজারের আলোকে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ এখন দৃশ্যমান। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যাতে পুঁজিবাজারে আসে আমাদের টার্গেট এখন সেটাই।
রাজস্ব আহরণকে জোর দিতে হবে।স্বাবলম্বী হতে হলে রাজস্ব আহরণের ওপর জোর দিতে হবে।রাজস্ব বিভাগকে সরকার সহযোগিতা করতে চায়।তিনি এ সময় বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ করেন।
(ঢাকাটাইমস/ ২৯ জুন /এআর/ ঘ.)