logo ০৭ জুলাই ২০২৫
বর্ষায় নদী ভ্রমণ
সৈয়দ রশিদ আলম
০৫ জুলাই, ২০১৬ ০১:০১:৫১
image




বর্ষাকালে যারা নৌ ভ্রমণ করতে চান, অথবা নদীর রুদ্ররূপ দেখতে আগ্রহী তারা নদীর টানে সারা দেশে ভ্রমণে বেরিয়ে যান। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও একাধিক বেসরকারি ট্যুর অপারেটর ভ্রমণপ্রেমীদের নদীমাতৃক বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নিয়ে যান। এ রকম কয়েকটি নদী ভ্রমণের কথা আপনাদের জানাব।



পদ্মা : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস লিখে পদ্মা নদী প্রতিটি বাঙালিকে চিনিয়েছেন এই অর্থে যে, এই নদীতে নির্ভরশীল একদল সংগ্রামী মানুষের জীবনটা কেমন। পদ্মা নদীকে নিয়ে একাধিক গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, কবিতা, নাটক রচিত হয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বা বেসরকারি ট্যুর অপারেটররা ঢাকার সদরঘাট থেকে তাদের নিজস্ব জাহাজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করে থাকেন।



প্রথমে বুড়িগঙ্গা থেকে যাত্রা শুরু হবে। বুড়িগঙ্গার শীর্ণদশা দেখে আপনার কান্না পেলেও আস্তে আস্তে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে যখন ধলেশ্বরী নদী পৌঁছে যাবেন তখন মুন্সিগঞ্জের গ্রামবাংলার নির্জনতা লক্ষ করবেন। তারপর মেঘনা নদী পাড়ি দিতে দিতে এক পর্যায়ে চাঁদপুরের বিখ্যাত পদ্মা নদীর তীরে আপনার জাহাজ বিরতি নিবে। সেখানে দুই ঘণ্টার বিশ্রাম পর্ব, দুপুরের খাবার, সেই খাবারে পদ্মার তাজা ইলিশ ও কয়েক প্রকার আচারের সঙ্গে পোলাও, কয়েক ধরনের ফল আপনার সামনে চলে আসবে। আসার পথে যদি মনে করেন তাহলে প্রিয়জনের জন্য খুব অল্প মূল্যে পদ্মার ইলিশ নিয়ে আসতে পারবেন। যখনি যাবেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাবেন।



যমুনা : এক পাশে টাঙ্গাইল আর এক পাশে সিরাজগঞ্জ। মাঝে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু। যদি মনে করেন ট্রলারে করে সারা দিন কোনো ছাউনি নেওয়া ট্রলারে ঘুরে বেড়াবেন, সে ব্যবস্থাও আছে। তবে খাবারের আয়োজন আপনাকে করতে হবে। সারা দিনের জন্য ট্রলার ভাড়া বাবদ দুই হাজার টাকা। ঢাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী যমুনার আসল রূপ দেখার জন্য বর্ষাকাল বেছে নেন।



কীর্তনখোলা : চাঁদপুর থেকে পাড়ি দিয়ে যত সামনে বাড়তে থাকবেন, যে নদী আপনাকে বরণ করার জন্য অপেক্ষা করছে সেই নদী হচ্ছে কীর্তনখোলা নদী। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও কবিরা কীর্তনখোলা নদী নিয়ে একাধিক রচনা তৈরি করেছেন। এছাড়া কীর্তনখোলা নদী নিয়ে রচিত হয়েছে একাধিক নাটক ও চলচ্চিত্র। কীর্তনখোলার আগের রূপ না থাকলেও এখনো শত শত নদীপ্রেমিক পর্যটক কীর্তনখোলায় নৌ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। যদি মনে করেন ট্রলারে সারা দিন ঘুরে বেড়াবেন তাহলে দিনব্যাপী একটি ট্রলারের সঙ্গে চুক্তি করে নিতে পারেন। খাবারের আয়োজনের দায়িত্ব যদি ট্রলার মালিককে দেন তাহলে তিনিই খাবারের আয়োজন করবেন। যেখানে বলবেন সেখানেই ট্রলার চালক আপনাকে নিয়ে যাবেন।



সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কীর্তনখোলা নদী ভ্রমণ করতে গিয়ে বরিশালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকবেন। আর কেন বরিশালকে ধান, নদী, খাল এই তিনে বরিশাল বলা হতো তা পুরোপুরি উপলব্ধি করবেন। যদি মনে করেন স্থানীয় হোটেল থেকে খাবারের প্যাকেট ট্রলারে নিয়ে উঠবেন তাও পারবেন। বরিশাল লঞ্চঘাটে একাধিক স্পিডবোট, ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছাড়াও উন্নতমানের প্রচুর খাবারের হোটেল পাবেন। তবে নৌ ভ্রমণ যারা করবেন তারা লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে যারা সাঁতার জানেন না।



তুরাগ : ঢাকার মিরপুর ১নং গুদারাঘাট থেকে তুরাগ নদী ভ্রমণ করার উপযোগী একাধিক ছাউনিযুক্ত ট্রলার পেয়ে যাবেন। তবে দামাদামি করে তবেই ট্রলারে উঠবেন। এই ট্রলার চালকরা আপনাকে তুরাগ নদীর দুই পাশের গ্রামগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন। বাঘসাতরা গ্রাম থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত তুরাগ নদীর ভ্রমণের রুট। যেখানে খুশি নেমে সাভারের প্রাচীন হিন্দু মন্দিরসহ স্থানীয় স্থাপনাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। বাঘসাতরা থেকে পাড়ি দিয়ে খুব দ্রুত বিরুলিয়া পৌঁছে যাবেন। গিয়ে দেখবেন নতুন করে একটি সেতু নির্মিত হয়েছে। যার ফলে ঢাকা শহরের সঙ্গে সাভারের দূরত্ব অনেকটাই কমে গেছে।



তুরাগ নদী ভ্রমণকালে কয়েক ডজন বেদে সম্প্রদায়ের নৌকা দেখবেন। এই বেদে সম্প্রদায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নৌকাতেই থাকে। যদি মনে করেন বেদে সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরিচিত হবেন, ছবি তুলবেন তাও পারবেন। সেই সঙ্গে বিরুলিয়া বাজার থেকে নানা ধরনের দেশীয় ফল, নদীর মাছ, ফরমালিনমুক্ত শাক-সবজি কিনতে পারবেন। বিরুলিয়ার হোটেলগুলোতে তাজা মাছের স্বাদও নিতে পারবেন। উল্লিখিত নদী ছাড়া সারা দেশে আপনার পছন্দের নদী ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে ভালোভাবে বুঝতে হলে বর্ষাকালই হচ্ছে ভ্রমণের সেরা সময়।