logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
ঈদের ছুটির পর সচিবালয় ও প্রশাসন
‘জঙ্গিময়’ প্রথম কর্মদিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১০ জুলাই, ২০১৬ ২০:১৫:৫২
image



ঢাকা: ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রধান আলোচ্য ছিল জঙ্গি। বিশেষ করে গুলশান ট্র্যাজেডি ও শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সর্বত্র।






প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সবাই জঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও করণীয় সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন তাদের ঈদ শুভেচ্ছা বক্তব্যে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলোচনায়ও প্রধান বিষয় ছিল জঙ্গি।






ঈদের ছুটির পর আজ রবিবার প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে আরও একটি ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণত দেখা যায় ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে বিরাজ করে ছুটির আমেজ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি থাকে খুব কম।






আজ বেশির ভাগ মন্ত্রীই সচিবালয়ে অফিস করেছেন। মন্ত্রণালয়ে এসে কেউ সভাকক্ষে, কেউ বা নিজ দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় সব মন্ত্রীর বক্তব্যে ঘুরেফিরে এসেছে জঙ্গি প্রসঙ্গ। তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্ত্রাস ও জঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।






প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তেজগাঁয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলেন, জঙ্গি মোকাবেলায় যতটা কঠোর হওয়া দরকার, সরকার ততটাই কঠোর হবে। এ ক্ষেত্রে কারও সমালোচনা শোনা হবে না।






গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গিরা পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্ক থাকার পরও এই ধরনের ঘটনা ঘটা দুঃখজনক।






জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হয়। জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। পুলিশ বাহিনীকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, সব শ্রেণির মানুষকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।






স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।






বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলেন, দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা চালানো হয়। তবে জঙ্গিদের এই সমস্যা সাময়িক বলে মন্তব্য করেন তিনি।






নিজ দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কয়েকটি নির্দেশনা জারি করেন। এর মধ্যে রয়েছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তা জানাতে হবে মন্ত্রণালয়কে।






আগামীকাল সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান  কোনো ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে বলেছেন। অবশ্য তিনি এ-ও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতেই দেশে জঙ্গি হামলা হচ্ছে।






বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে সম্প্রচারমাধ্যমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা করা হয়েছে। তবে জঙ্গিদের মোকাবিলার জন্য সরকার এক পায়ে খাড়া বলে জানান তিনি।






বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে  সহকারী জজদের একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী জঙ্গিদের জামিনের বিষয়ে বিচারকদের কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।






এদিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকেও প্রধান আলোচনা ছিল জঙ্গি। নিশা দেশাই তার দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গি দমনে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব দেন।






আজ সচিবালয়ে অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ অফিস করেন।






তাদের দপ্তরেও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর আলোচনা ও বক্তব্যে এসেছে জঙ্গি প্রসঙ্গ।






সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশ উপস্থিতি দেখা যায়।






তবে প্রথম দিনটি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও গল্প-গুজবের মধ্যে কাটে তাদের। সচিবালয় চত্বর, ভবনগুলোর বারান্দা, সিঁড়ি, লিফট, কক্ষে কক্ষে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। তাদের আলোচনায় গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা ও ঈদের দিন কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি স্থান পায়। অনেকের উদ্বিগ্ন প্রশ্ন ছিল- কী হচ্ছে দেশে?






গত ৭ জুলাই দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। সরকারি চাকরিজীবীরা এবার ঈদের ছুটির আগে-পরে সাপ্তাহিক ছুটিসহ টানা ৯ দিনের ছুটি ভোগ করেন। ১ জুলাই শুরু হওয়া ছুটি শেষ হয় ৯ জুলাই।






দীর্ঘ ছুটিতে বিরান পড়ে থাকা সচিবালয়ের গাড়ি রাখার জায়গাগুলো আজ ছিল পূর্ণ। তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল কিছুটা কম।






(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/এইচআর/মোআ)