logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা
মেয়ে ও জামাতার ‘প্ররোচণায়’ ‘নতুন পথে’ রোকন পরিবার
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১৯ জুলাই, ২০১৬ ১৯:১৬:১৩
image




ঢাকা: পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে নিখোঁজ হওয়া শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনউদ্দিন রামপুরায় যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটি এলাকাবাসীর কাছে বেশ পরিচিত। এই চিকিৎসক তো বটেই তার শ্বশুর প্রয়াত আলী আহম্মেদ ছিলেন প্রখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। এই পরিবারের হঠাৎ অন্তর্ধান আলোচনার খোরাক তৈরি করেছে এলাকায়।



মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার ৪১১/বি নম্বর বাড়িতে থাকতেন রোকনউদ্দিনের পরিবার। স্থানীয়রা জানান, গত বছর রোজার মাঝামাঝির আগে রোকনউদ্দিনের পরিবারের কাউকে আর বাইরে আসতে দেখেননি তারা। ভেবেছিলেন হয়ত ঈদ করতে বাড়ি বা অন্য কোথাও গেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে এদেরকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার আর নানা সংবাদ প্রকাশের পর তারা জানতে পারেন কী হয়েছে।



সাদ্দাম নামের এক স্থানীয় যুবক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে শুনেছিলাম ওনারা আমেরিকায় চলে গেছেন। আবার গতকাল শুনলাম ওনারা মালয়েশিয়ায় গেছেন। তবে ঠিক কোথায় গেছেন তা বলতে পারব না’।



রোকনউদ্দিনের এক স্বজন জানিয়েছেন, নিখোঁজ হওয়ার পর রোকন তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন তারা সবাই ভালো আছেন। তিনি জানান, অবস্থান জানতে চাওয়ার পর রোকন বলেছিলেন, তারা একটি মুসলিম দেশে আছেন। তবে কোন মুসলিম দেশে, তা বলেননি তিনি।



এলাকাবাসী আর পরিচিতজনরা বলছেন, রোকন উদ্দিন বেশ সদালাপী আর ভদ্র আচরণ করতেন সবার সঙ্গে। তবে মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর থেকেই ধর্মের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায় গোটা পরিবারে।



চিকিৎসক রোকন উদ্দিনের বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকন পড়তেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথে। তিনি ও তার স্বামী সাদ কায়েস-দুজনই ইংরেজি বিভাগে পড়তেন। তারা দুইজনই চিকিৎসক রোকনউদ্দিন ও তার স্ত্রী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাঈমা আক্তারকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলে সন্দেহ করছেন এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।



নর্থসাউথের বেশ কিছু শিক্ষার্থী উগ্রবাদে ধাবিত হয়েছেন এবং তারা বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানের অদূরে জঙ্গি হামলায় জড়িতদের দুইজন এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান বা সাবেক শিক্ষার্থী।



এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত কয়েক বছর ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর তৎপরতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তারাই শিক্ষার্থীদেরকে উগ্রবাদে দীক্ষিত করেছে- এমন অভিযোগ উঠে এসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। কেবল শিক্ষার্থী নন, একাধিক বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকও এই তৎপরতায় জড়িত বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।



এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় রেজওয়ানা রোকন বা সাদ কায়েক উগ্রবাদে ধাবিত হয়েছেন কি না, তাই যাচাইবাছাই করছে পুলিশ। বাহিনীটির ধারণা, এরাই পরে তাদের বাবা-মা ও ছোট বোন রামিতা রোকনকেও নিজেদের দীক্ষায় দীক্ষিত করেছে।



জানতে চাইলে রামপুরা জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার নুর আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পরিবারটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও জানতে পারিনি। তাদের নিখোঁজ হওয়ার তথ্যও আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। তাদের বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করছেন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারবো’।



স্থানীয়রা জানান, গত এক বছরে এই পরিবারের সদস্যরা ধর্মকর্মে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বাইরের মানুষদের সঙ্গে মেলামেশাও ছেড়ে দেন।



রোকন উদ্দিনের কর্মস্থল ঢাকা শিশু হাসপাতালে তার সাবেক সাবেক সহকর্মীরাও একই কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রোকন উদ্দিন আগে খুব একটা ধার্মিক ছিলেন না। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ধর্ম-কর্মে ঝুঁকে পড়েন, দাঁড়িও রাখেন’।  



রোকনউদ্দিনের স্ত্রী নাঈমা আক্তার চাকরি করতেন যশোর এম এম কলেজে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ছুটি নেন তিনি। ৪৬ দিনের ছুটি শেষে তার কাজে যোগ দেয়ার কথা বললেও তিনি আর যোগ দেননি।



স্থানীয়রা জানান, রোকনউদ্দিনের শ্বশুর হোমিও চিকিৎসক আলী আহম্মেদ ২০১০ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পর স্ত্রীর ভাই-বোনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে যান রোকন উদ্দীন ও তার পরিবার।



রোকন উদ্দিনের স্ত্রী নাঈমা আক্তারের বড়বোন হালিমা আক্তার বলেন, ‘রমজান মাসেই তারা গেছেন। কিন্তু কোথায় গেছেন, কেন গেছেন, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না’। বোন নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো কিছু করেনি। তবে আজ কালকের মধ্যে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করবো’।



এদিকে রোকনউদ্দিনের স্বপরিবারে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে পুলিশ।



ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/এএ/ডব্লিউবি







গোটা পরিবার ‘উধাও’