logo ০৬ জুলাই ২০২৫
মুক্তাগাছার মন্ডা
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
২২ জুলাই, ২০১৬ ১০:৪৮:১৬
image




মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মন্ডা অনেকেই তৈরি করেন। অনেক দোকানেই মন্ডা পাওয়া যায়। তৈরির সকল উপাদানও দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও পাওয়া যায় না গোপাল পালের বংশধরদের তৈরি মন্ডার স্বাদ। স্বপ্নে পাওয়া সাধুর ফর্মুলায় তৈরি মন্ডা যার একমাত্র বিক্রেতা গোপাল পালের বংশধর।







উপমহাদেশে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য দুধের তৈরি মিষ্টি আছে, যার কারণে ওই দেশ এবং অঞ্চল বিখ্যাত। যেমন ভারতের দিল্লির লাড্ডু, আলমোড়ার বালামিঠাই, লাল মোহন, পশ্চিমঙ্গের রাজভোগ রয়্যাল, অমৃতকুম্ভ, রসমালঞ্চ, ছানার টোস্ট, পাকিস্তানের সোনা মিয়ার মিষ্টি, গোলাপজামুন, নেপাল ও শ্রীলংকার গোলাপ জাম ও লাল মোহন ইত্যাদি। তেমনি বাংলাদেশের সঙ্গে মিশে আছে মুক্তাগাছার গোপাল পালের মন্ডা, কুমিল্লার রসমালাই, পোড়াবাড়ির চমচম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি। মুক্তাগাছার মন্ডার নাম শোনেননি ভোজনরসিকদের মাঝে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।







মন্ডা নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। দুই শতাধিক বছর আগে মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডার জনক গোপাল পাল এক রাতে স্বপ্না আদিষ্ট হলেন। শিয়রে দাঁড়িয়ে এক ঋষি তাকে আদেশ দিচ্ছেন- মন্ডা মিষ্টি তৈরি কর। পরদিন ঋষির আদেশে চুল্লি খনন শুরু করলেন গোপাল। দৈবাৎ উদয় হলেন সাধু। তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন চুল্লিতে। শিখিয়ে দিলেন মন্ডা তৈরির কলাকৌশল গোপালকে। দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হলো মন্ডা। গোপাল তার নবউদ্ভাবিত মন্ডা পরিবেশন করলেন তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দরবারে। মন্ডা খেয়ে মহারাজা পেলেন পরম তৃপ্তি, আর বাহবা দিলেন গোপালকে। শুরু হলো মন্ডার যাত্রা।







গোপাল সম্বন্ধে জানা যায়, বাংলা ১২০৬ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণকারী বাংলা ১৩১৪ সালে পরলোকগমণ করেন। নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর গোপাল মাতৃভূমি রাজশাহীতে চলে আসেন। পরে বাংলা ১২৩০ সালে তিনি মুক্তাগাছায় বসত গড়েন। প্রথম মন্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে।







মন্ডার মূল উপাদান দুধ ও চিনি। বর্তমানে এক কেজিতে ২০ পিস মন্ডা ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মন্ডা তৈরির পর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয় না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গরমের সময় ৩/৪ দিন ও শীতকালে ১০/১২ দিন ভালো থাকে।



পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান কৃষ্ণ রায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সারোদ বাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মন্ডা খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।







প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ শহরে ও মুক্তাগাছার বেশকিছু দোকানে মন্ডা বিক্রি হয়। যা আসল মন্ডা নয়। আসল মন্ডা একমাত্র গোপাল পালের আদি মন্ডা হিসেবে পরিচিত- যার কোনো শাখা নেই।



(ঢাকাটাইমস/২২ জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)