logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
ভারতীয় চাল আমদানিতে হুমকিতে চাতাল
রিমন রহমান, ঢাকাটাইমস
০৩ আগস্ট, ২০১৬ ০৯:৩৮:২০
image




রাজশাহী: অটো রাইস মিল ও ভারত থেকে চাল আমদানির কারণে রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকশ রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ভারত থেকে কম দামে চাল আসার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে মালিকরাও যেমন লোকসানের মুখে পড়েছেন, তেমননি বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ধান শুকানো চাতালগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন মালিক ও শ্রমিকরা। প্রতিবছর সরকারিভাবে অল্প পরিসরে চাতালগুলো থেকে চাল সংগ্রহ করা হলেও চলতি বছর এখনো চাল সংগ্রহ শুরু হয়নি। এর পাশাপাশি অটো রাইস মিলের প্রভাব ও ভারত থেকে কম দামে চাল আসার কারণে কমেছে তাদের আয়। সে কারণে অনেকে ব্যাংক ঋণের সুদ টানতে গিয়ে পথে বসেছেন। এরই মধ্যে জেলার অনেক চাতাল মিল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।



চাতালের মালিকদের অভিযোগ, সরকারিভাবে এবং অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে কম দামে চাল আমদানি করে বাজারে ও সরকারি গুদামে সরবরাহ করার কারণে চাতালগুলো বন্ধ হতে চলেছে। পাশাপাশি অটো রাইস মিলগুলো গড়ে উঠায় চাতাল ব্যবসায় ধস নেমেছে। আবার বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাও দেশি চাতাল মিলগুলোর চালের পরিবর্তে অটোরাইস মিলের সাদা চাল ও কম দামের ভারত থেকে আমদানি করা চালের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি।



জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত চাতালের সংখ্যা রয়েছে ৪৮৬টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ৫০টি। সচল আছে ৩৩৬টি। সরকারি তালিকার বাইরে আছে আরো ৫০টির বেশি চাতাল। সেগুলোও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। রাজশাহী জেলার মতো আশেপাশের জেলাগুলোতেও একই অবস্থা।



রাজশাহীর তানোর উপজেলার জুমার পাড়ার সরকারি তালিকাভুক্ত আজাদ চাতালের মালিক আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশে বাজারে চালের কোনো কমতি নেই। তবুও সরকারি-বেসরকারিভাবে ভারতীয় চাল আমদানি করা হচ্ছে। এ কারণে দেশিও চালাতগুলো টিকতে পারছে না। এর প্রভাবও পড়ছে প্রান্তিক কৃষকদের উপর।



গোদাগাড়ী পৌর এলাকার চাতাল মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাঁচ বছর আগে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে এক একর জমির উপর চাতাল করেছিলেন তিনি। শুরুতে বেশ ভালোই চলছিল। সেখানে ৩৫ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কর্মস্থান হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে তার ব্রয়লার চলে না বললেই চলে। বছরে শুধু এক দুই মাস কোনো রকমে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক দিয়ে অল্প পরিসরে কিছু চাল তৈরি করা হয়।



জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই বছর চাতাল না চলায় প্রতি মাসে ব্যাংক ঋণের সুদ টানতে গিয়ে বাড়ির জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। ঋণ তো দূরের কথা সুদও পরিশোধ হয়নি এখনো।



গোদাগাড়ী উপজেলা চাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব জানান, কয়েক বছর আগেও চাতাল থেকে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু গত দুই এক বছর থেকে চাতাল থেকে অল্প পরিসরে চাল নিচ্ছে সরকার। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে চাতাল মালিকরা।



রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুজা আলম জানান, জেলার চাতালগুলো সরকারের তালিকাভুক্ত। এইসব চাতালগুলো থেকে প্রতিবছর একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে চাল কিনে থাকে সরকার। চলতি বছরের চাল কেনার জন্য এই মাসের ৪ আগস্ট চাতাল কল মালিকদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হবে এবং ৩১ আগস্টের মধ্যে তা শেষ হবে।



তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলে অনেক অটোরাইস মিল গড়ে উঠেছে। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেশি। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকে ধান তারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সেভাবে চাতাল মালিকরা পেরে উঠছেন না । সে কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছেন।



খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক চাতাল নাজুক অবস্থানে আছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে চাতাল করেছেন। কিন্তু সেভাবে সরকার তাদের কাছে থেকে চাল কিনতে পারে না। প্রতি বছর একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে অল্প পরিসরে চাতাল থেকে চাল কেনা হয়ে থাকে। তাই চাতাল মিল টিকিয়ে রাখতে শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে বিকল্প উপায়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার পরামর্শ দেন তিনি।



(ঢাকাটাইমস/৩ আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)