logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
বহু দলের সাখাওয়াত এখন ‘কারও না’
তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১০ আগস্ট, ২০১৬ ১৫:৪৪:০৪
image



মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য। পরে নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধে দল ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে। এই দলের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশও নেন তিনি। পরে আবার বিএনপি ছাড়েন, নানা দল ঘুরে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে।






এরশাদের দলেও বেশিদিন থাকেননি সাখাওয়াত হোসেন। নানা সময় একে একে সাবেক বিএনপি নেতা অলি আহমেদের এলডিপি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টি-পিডিপি, চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন ঘুরে আবার এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ঠাঁই হয় সাখাওয়াত হোসেনের। পান দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ।






একাত্তরে যশোরের কেশবপুরে নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন এই সাখাওয়াত। আর পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণ হওয়ার পর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।






মুক্তিযুদ্ধের পর আত্মগোপনে থাকা এই নেতা পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন জামায়াতের হাত ধরেই। ১৯৯১ সালে তাকে ওই আসনে মনোনয়ন দেয় দলটি। সে সময় জেতার পর জামায়াতের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় তার। আর ১৯৯৬ সালে তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির হয়ে। কিন্তু আর জিততে পারেননি।






সাখাওয়াত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে গর্বের সীমা ছিল না স্বাধীনতাবিরোধী দলটির। কিন্তু নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জেরে দল ছাড়ার পর এই নেতাই আবার ‘শত্রু’ হয়ে যায় জামায়াতের।






এর আগে ট্রাইব্যুনালে দলের নেতাদের ফাঁসির রায় হলেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াত। এখন সে রকম সহিংসতা না করলেও শুরুর দিকে ব্যাপক নাশকতা চালিয়েছে দলটি। তাদের দাবি, ইসলামের পক্ষে কথা বলায় তাদের নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে জামায়াতকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে সরকার। অথচ দলের সাবেক সংসদ সদস্যের ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর জামায়াতের কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। নূন্যতম একটি বিবৃতি দেয়নি দলটি।






মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসির রায়ের পর নিশ্চুপ থেকেছে বিএনপি। এ নিয়ে জোটের শরিক দলটি নাখোশ হলেও এই কৌশল বজায় রেখেছে বিএনপি। দলের সাবেক নেতার ফাঁসির রায়েও কোনো কথা নেই এই দলেরও।






আরও পড়ুনঃ- সাখাওয়াতের ফাঁসি, সাতজনের আমৃত্যু দণ্ড






যোগাযোগ করা হলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এই বিষয়টি নিয়ে কোনো কথাই বলতে চাননি। সাখাওয়াতের আরেক সাবেক দল চরমোনাইয়ের পীরের দল কী ভাবছে? জানতে চাইলে এক নেতা এড়িয়ে যান প্রসঙ্গটি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘তিনি তো জামায়াত থেকে বিএনপি হয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু আমাদের ওপরও সন্তুষ্ট ছিলেন না’।






আপনাদের দলের সাবেক নেতার ফাঁসি কোনো প্রতিক্রিয়াই দেবেন না?- জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘আমি একটু চিটাগাং রোডে এসেছি। এখন কিছু বলতে পারবো না।’






জানতে চাইলে এই দলের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি, এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবো না।’






কী ভাবছেন সাখাওয়াতের বর্তমান দল জাতীয় পার্টি? প্রকাশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এই দলেরও। যোগাযোগ করা হলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না, মাত্র বাইরে থেকে দেশে এসেছি।’






জাতীয় পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিষয়ে আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না।’ কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত একজন নেতাকে কেন দলে নেয়া হলো-জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘ওনি এর আগেও বিভিন্ন দল করেছেন। এখন আমাদের দলে এসেছেন, পরে আবার আমাদের দল ছেড়ে অন্য দলে গেছেন, পরে আবার ফিরে এসেছেন। এটা আমাদের দেশের রাজনীতিতে হয়েই থাকে।’






মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এর আগে জাতীয় পার্টির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। তখনও এই রায়ের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি। একই অভিযোগে দলের বর্তমান সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহের ত্রিশাল আসনের) এম এ হান্নানের বিচার চলছে। এ নিয়েও প্রতিক্রিয়াহীন জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলটি।






(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/টিএ/ডব্লিউবি)