logo ০৪ আগস্ট ২০২৫
‘এ রকম আরও আছে’
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
০৯ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:০৯:১৩
image



বাবা বা অভিভাবকের মুক্তিযোদ্ধা সনদ থাকলে সরকারি চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণে ভুয়া সনদ দাখিলের অভিযোগ আছে। আর তদন্তে প্রমাণ পেয়ে পাবনায় পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি নেয়া ১৯ জনকে বরখাস্তের পাশাপাশি গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ খ ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, এমন প্রতারক আরও আছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।






এ রকম আর কত জনকে পাওয়া গেছে-সে সংখ্যা অবশ্য বলেননি মন্ত্রী। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘শুধু পুলিশ বাহিনীতে নয় অনেক মন্ত্রনালয়ে ভুয়া সনদে চাকরি নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তার তার সংখ্যা এখনই বলা যাবে না।’






মন্ত্রী না বললেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভুয়া সনদে পুলিশে চাকরি নিয়েছেন, এমন ৪১ কর্মকর্তার তালিকা এই মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে।






জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া দুইটি তালিকায় ৪৮ জনের সনদ যাচাইবাছাই করতে দেয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি সঠিক পাওয়া গেছে। বাকিদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুনীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারাই এগুলো দেখবে।’






মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও পোষ্যদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা পোষ্যরা ৩০ শতাংশ কোটা পান। আবার চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধারা দুই বছর অতিরিক্ত চাকরি করতে পারেন। এই সুযোগ-সুবিধা নিতে অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অসৎ উপায়ে গেজেটে নাম উঠিয়ে সনদ নিয়েছে। এ নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।






নিচু সারির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার প্রমাণ মিলেছে।






জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ধরা পড়ার পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিন সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদের গেজেট বাতিল করা হয়। তারা হলেন সে সময়ের স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক সচিব এ কে এম আমির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং যুগ্মসচিব আবুল কাসেম তালুকদার।






এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট স্থগিত করা হয়। এদের পর কাউকে অবসরে এবং কাউকে চাকরি ছাড়ার মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ১৬ কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। এদের একজন খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ সিদ্দিকী।






এ কারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাইবাছাই করে ভুয়াদের বের করে দিতে কাজ চলছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে আরও অন্তত এক বছর আগে এই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি।






কেন নির্ধারিত সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ভুয়াদের শনাক্ত করা যায়নি-জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজার রহমান মোল্লা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটি রিটের কারণে যাচাইবাছাই কার্যক্রম স্থগিত আছে। উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে এই রিটটি।’






সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার গেজেটেড (সনদপ্রাপ্ত) মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আর নতুন করে অন্তভূক্তির আবেদন করেছে আরও কয়েক হাজার। এর পাশাপাশি অন্তত ৫০ হাজার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।






পাবনায় গ্রেপ্তার ১৯ জন কারাগারে






আমাদের পাবনা প্রতিনিধি জানান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগে জেলায় গ্রেপ্তার ১৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে সেখান থেকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে পাঠানো হবে। সেখানে তাদের বাড়ি এবং বেলকুচি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।






এই ১৯ জনই তাদের অভিভাবকের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ জমা দিয়ে পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়েছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণ হয়। এরপর সোমবার তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।






ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/এইচআর/ডব্লিউবি