রাজশাহী: পিস স্কুল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগেই রাজশাহীতে এই স্কুলের নাম পাল্টে লিজেন্ড একাডেমি করে ফেলে উদ্যোক্তারা। সরকারি সিদ্ধান্ত আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় পিস স্কুল বন্ধ হয়ে গেলেও রাজশাহীতে এর কোন প্রভাব পড়েনি।
কেবল নাম পাল্টানো নয়, আরও কৌশল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষ, পাঠ্যবই-সবই আছে আগের মতোই। তবে পাল্টে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক পরিচ্ছদ। ছাত্রীদের আগের মতো হিজাব পরতে দেয়া হচ্ছে না। ছাত্রদেরও মাথায় টুপি দিতে বারণ করা হয়েছে।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই স্কুলটিও পরিচালনা করেন জামায়াতের কিছু নেতা। জামায়াতের টাকাতেই স্কুলটি পরিচালনা করা হয়। ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখার কর্মকর্তা মোর্সেদ জামান স্কুলটির দেখভাল করেন। আর অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্কুলটির নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬০ জন। দুই শিফটে স্কুলটি সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর একটা এবং দুপুর একটা থেকে চারটা পর্যন্ত চলে। নিজস্বও আবাসিকেরও ব্যবস্থা রয়েছে স্কুলটির। আর শিক্ষকের সংখ্যা ২০ জন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় অবস্থিত পিস স্কুলটিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের সব কার্যক্রমই চলছে আগের মতো। স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রীর হিজাব নেই। টুপিও দেখা যায়নি ছাত্রদের মাথায়।
অফিস কক্ষে পাওয়া যায় স্কুলের নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানকে। তিনি জানান, গত ১৪ জুলাই থেকে স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি এখন ‘লিজেন্ড একাডেমি’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। আর স্কুলটির নাম পরিবর্তন করায় শিক্ষার্থীদের পোশাকেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই আগের মতোই আছে।
তৌফিক আরও জানান, সরকারের পিস স্কুলের বন্ধের নির্দেশ নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। কারণ তারা স্কুলের নামই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নতুন নামে স্কুল চালাতে তারা সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখায় আবেদনও করেছেন।
স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক জানান, সরকারের সিদ্ধান্তে স্কুল কর্তৃপক্ষ চিন্তিত না হলেও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। কিছু দিন আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ রাতারাতি স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ফেলে। এখন স্কুলটি আদৌ চলবে কী না তা নিয়ে তারা চিন্তায় পড়েছেন। আবার বছরের মাঝামাঝি সময় তারা তাদের সন্তানকে অন্য কোথাও ভর্তিও করতে পারছেন না।
স্কুলটির ব্যাপারে জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসার মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘পিস স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। এসব স্কুল দেখার দায়িত্বও আমার নয়। স্কুল বন্ধ করা না করা প্রশাসনের ব্যাপার। এ ব্যাপারে তারাই ব্যবস্থা নেবে।’
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও রাজপাড়া থানা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, সরকারের নজর এড়াতে পিস স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, তাদের কার্যক্রম এবং পাঠ্যবই আগের মতোই রয়েছে। তাই খুব শিগগিরই স্কুলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) পারভেজ রায়হান বলেছেন, নাম পরিবর্তন করলেই স্কুলটি প্রশাসনের নজর এড়াতে পারবে না। হঠাৎ করে নাম পাল্টে ফেলার মধ্যে দিয়েই তাদের দুর্বলতা বোঝা যায়। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুমোদনহীন সারাদেশের পিস স্কুলগুলো বন্ধ করে দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। পরে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকারি আদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া পিস স্কুলের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর)