বগুড়া: মানিকগঞ্জের শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের ওসমান শেখ। বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়েছেন। ঘরে খাবার নেই। মন্ত্রী আসবেন, ত্রাণ দেবেন শুনে ধীর কদমে হেঁটে দাঁড়ালেন লাইনে। কিন্তু ‘জোয়ান-তাগড়া’দের সঙ্গে ওসমান শেখ পারেন কি করে? তাই ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরতে হলো ওসমানকে।
সোমবার মানিকগঞ্জে ত্রাণ দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সেই ত্রাণের অপেক্ষায় ছিল হাজারো ওসমান শেখরা। কিন্তু মন্ত্রীর এত মানুষকে ত্রাণ দেয়ার সময় নেই। তাই বেশিরভাগই ফিরেছেন ভগ্ন হৃদয়ে।
মন্ত্রী আসার আগেও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এই জেলায়। তখনও ত্রাণ যোগাড় করতে পারেননি ওসমান বা তার মত ‘দুর্বল’ মানুষরা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় এই জেলায় ১২ লাখ টাকা ও ১৭৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে। কিন্তু জেলা প্রশাসক বলছেন, এটা পর্যাপ্ত নয়, আরও লাগবে। মন্ত্রী পরে আরও ২০ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেন।
রমজান নামে আরেক বৃদ্ধ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মন্ত্রী তো দিয়া যায়, কিন্তু আমরা পাই না। তাইলে কারা পায়?’।
মানিকগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে এসেও এসব নানা প্রশ্ন আর অভিযোগের মুখোমুখি হন ত্রাণমন্ত্রী মায়া। বলে যান, ত্রাণ আত্মসাৎ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফৌরদৌস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। স্বল্পতার কারণে হয়তো কেউ কেউ পায়নি। তবে সবাইকেই ত্রাণ দেয়া হবে। কেউ বাদ যাবে না।’
মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ত্রাণের কোনো অভাব নেই। পর্যাপ্ত মজুদ আছে, সবাই পাবে, প্রয়োজনে সবার ঘরে পৌঁছে যাবে। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে সোমবার বের হয়ে প্রথম দিন মানিকগঞ্জের শিবালয়, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলা ইউনিয়ন, বগুড়ার ধুনটে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় তিনি তিন জায়গায়ই বক্তব্য দেন।
এসব বক্তৃতায় ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা বজায়ে রাখা ও বিত্তবানদের প্রত্যেকটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান মন্ত্রী। তার সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচারক রিয়াজ আহমেদ।
ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ শুধু মানিকগঞ্জেই নয়, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায়ও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জহুরা নামে এক দুর্গত নারী বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ ধইরা পানিতে ভাসছি। শুনেছি সরকার ত্রাণ দিছে। কিন্তু আমরা পাই না।’
হাফিজা খাতুন নামে আরেক মধ্যবয়সী নারী বলেন, ‘সরকার দেয় শুনি, কিন্তু আমরা পাই না, কেউ কেউ খাইয়া ফালায়।’
বগুড়ার ধুনটেও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় ধুনটের ভাণ্ডারবাড়ি ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ হয় এক সপ্তাহ আগে। ওই সময় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পছন্দের লোক ছাড়া অন্যরা এই চাল পায়নি বলে বলে অভিযোগ করছেন দুর্গতরা।
খাদিজা নামে এক নারী বলে, ‘আমি পাই নাই, পাইছে সেরাবাড়ির লোকজন। ওই পাড়ার মেম্বার শক্তিশালী। উনি ওনার লোকদের ত্রাণ দিছে। আজকেও মুখ চিইন্যা স্লিপ দিছে।’
একই অভিযোগ করলেন রেনুকা, মাঝু, জামালসহ আরও অনেকে।
দুর্যোগ সচিবের অসন্তোষ
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও বিশঙ্খল পরিস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ সচিব শাহ কামাল। টাঙ্গাইলে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ত্রাণের অভাব নেই। প্রত্যেকটা মানুষই ত্রাণ পাবেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তারপরও দেখছি অনেকেই নিয়ম শৃঙ্খলা না মেনে ত্রাণ নিচ্ছেন। কেউ দুইবার নিচ্ছেন। আবার কেউ পাচ্ছেন না।’
মানিকগঞ্জের ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘সেখানে আমি দেখলাম এক বৃদ্ধ নিজে হাঁটতে পারেন না, তার হাতেই আবার দুটি বস্তা। আর অনেকে দেখি না পেয়ে বসে আছে। এমন যেন না হয়।’
(ঢাকাটাইমস/২ আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি)