logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
নিহত ‘জঙ্গি’ আকিফুজ্জামান মোনায়েম খানের নাতি
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৮ জুলাই, ২০১৬ ১৮:৫৭:০৮
image



ঢাকা: বাঙালি হয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন আবদুল মোনায়েম খান। কুখ্যাত এই রাজনীতিবিদের বংশধর জড়িয়েছিলেন জঙ্গি তৎপরতায়। কল্যাণপুর অভিযানে নিহত জঙ্গিদের একজন এই আকিফুজ্জামান খান।






এই কুখ্যাত রাজনীতিবিদের তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাইফুজ্জামান খান। তার ছেলেই আকিফুজ্জামান।






সাবেক মুসলিম লীগ নেতার এক স্বজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সে (আকিফুজ্জামান) কীভাবে বিপথগামী হয়েছে তা আমরা জানি না। পুলিশের ছবি প্রকাশের পরই বিষয়টা জানতে পারলাম।’






জানতে চাইলে মোনায়েম খানের আরেক ছেলে ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের একাংশের সভাপতি কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই’। কেবল এটুকু বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।






গত বুধবার রাতে কল্যাণপুর অভিযানে নিহতদের নাম ও ছবি প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এতে আকিফুজ্জামান খানের ঠিকানা দেয়া হয়েছে গুলশান-১ এর ১০ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাসা।






মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর মোনায়ের খানকে বনানীতে তার বাসভবনে হত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক। এই ঘটনাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিরাট অর্জন হিসেবেই দেখা হয়। তার মৃত্যুর পর স্বজনদের আর তেমন কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।






সাইফুজ্জামান খানের মৃত্যুর পর গুলশান-১ এর ১০ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িটি দেখাশোনা করতেন আকিফুজ্জামান ও তার মা। তবে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না।






আকিফুজ্জামানের মৃত্যুর পর সাংবাদিকরা ওই বাড়িটিতে গেলে বাসিন্দারা তাদেরকে অনেকটাই এড়িয়ে চলেছেন। বারবার অনুরোধ করার পর বোরকা পরা এক নারী এসে বলেন, ‘আপনার কী বলবেন, আমার মানসিক অবস্থা ভাল নেই। বুজতেই পারছেন’। এ কথা বলেই তিনি ঘরে চলে যান।






এই নারী ঘরে ঢুকে যাওয়ার পর আরও কিছু তথ্য জানতে ফের কলিং বেলে চাপ দিলে ওই নারী আর দরজা খুললেন না। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি আসলেন কথা বলার জন্য। তিনিও টিপলেন কলিং বেল। ১০ মিনিট পরে বোরকা পরা ওই নারী ফের মাথা বের করে একই কথা বললেন। দরজা বন্ধ করে ভেতরে চলে গেলেন। মূল দরজা বন্ধই রইল। যেটুকু কথা মূল দরজার ফাঁক দিয়ে।






এই বাসার পাশেই বার ‘এসটিএল ডিপ্ল্যোম্যাট ওয়ার হাউজ’। এই বাড়িটি আকিফুজ্জামানের চাচার। তিনি সেখানে থাকেন না, বারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি প্রায় ভুতুড়ে হয়ে পড়ে থাকে।মাঝে মধ্যে বাড়িটির এক নাড়ি (আকিফুজ্জামানের মা) গাড়িতে করে বের হন আবার গাড়িতে করে বাড়ি ফেরেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাসার কাছাকাছি একটি বাসার দারোয়ান এই প্রতিবেদককে জানান, আকিফুজ্জামানকে তিনি চেনেন। ওই তরুণ ছিলেন নিভৃতচারী। কারো সঙ্গে সেভাবে মিশতেন না তিনি। থাকতেন একা একা।






দুইতলা বাড়িটির মূল সড়কের পাশে পূর্বদিকে এবং উত্তর পাশের গলির সড়কের দিকে মোট দুটি গেট রয়েছে। তবে উত্তর পাশের গেটটি তালা দেয়া এবং গেটের সামনে ময়লার স্তূপ। পূর্ব পাশের মূল গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে ধুলোপড়া একটি পুরনো গাড়ি দেখা গেছে।  অনেক দিন বাড়িটি রঙ করা হয় না বলে মনে হয়।






নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে এক প্রতিবেশী জানান, এই বাড়িটির যত্ন নেয়া হয় না। বাড়িকে কোনো ছেলে অভিভাবক নেই। সাইফুজ্জামান খান মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী আর আকিফুজ্জামানই দেখভাল করতেন বাড়িটির। আগে বাড়ি ভাড়া দিলেও গত এক বছর ধরে তারা বাড়ি ভাড়া দেন না।






ওই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানালেন, এই বাড়িটি মোনায়েম খানের বংশধরের। সাইফুজ্জামান খান মোনায়েম খানের উত্তরসূরিদের একজন বলে জেনেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তার দাদা মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন। মোনায়েন খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবরে বনানীস্থ বাসভবনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের গুলিতে মারাত্মক আহত হোন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।’






তবে আকিফুজ্জামানের লেখাপড়া সম্পর্ক নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।






এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘আকিফুজ্জামান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’






(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এমএম/ডব্লিউবি)