logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ‘হাত গুটিয়ে’ বিএনপি
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
২৩ জুলাই, ২০১৬ ০৮:০৯:৫১
image



ঢাকা: সরকার সাড়া না দিলেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটবে না বিএনপি-এমন ঘোষণা দিলেও জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠনে কার্যত কোনও উদ্যোগ নেই দলটির।






নেতারা বলছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু হবে। এদের কাছে দলের নেতারা খালেদা জিয়ার আহ্বানের কথা তুলে ধরবেন। তবে কবে নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নিশ্চিত করে নেতাদের কেউ কিছু বলতে পারছেন না।






জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বললে আমরা এ বিষয়ে অন্ধকারে আছি। কারণ কীভাবে কী করা হবে তা বিএনপি ভালো জানে। আর জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া করণীয় ঠিক করবেন। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।’






গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর ৩ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ার ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।






এরপর ১৩ জুলাই স্থায়ী কমিটিসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। একইদিন শরিক জোট ২০ দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। পরদিন ১৪ জুলাই তিনি সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।






বৈঠকে অংশ নেয়া প্রায় সবাই চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে জাতীয় ঐক্য তৈরি করার পরামর্শ দেন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে সামিল করার পরামর্শ দেন। জানা গেছে, খালেদা জিয়ায় চিন্তায় এমনটাই ছিল। যা তিনি বৈঠকে জানিয়েও দিয়েছেন।






জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় কনভেনশন করার চিন্তা






তবে এই ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে যাদের পরামর্শ এসেছে তার মধ্যে বেশিরভাগেরই আপত্তি ছিল জামায়াত নিয়ে। যারা কথা বলেছেন তারা খালেদা জিয়াকে বলেছেন, জাতীয় ঐক্যে প্রধান বাধা জামায়াত। কারণ শুধু আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নয়, রাজনৈতিক দলের বাইরে অনেকে জামায়াত থাকায় এতে শামিল হবেন না। তাই তারা খালেদা জিয়াকে জামায়াতের বিষয়ে করণীয় ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন।






বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ আইনজীবী রফিক উল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের বিষয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন।






১৩ জুলাইয়ের বৈঠকে খালেদা জিয়াও জামায়াতের প্রতিনিধির উদ্দেশে বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে জামায়াতই সবচেয়ে বড় বাধা। জামায়াতের কারণেই বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল ঐক্যের আহ্বানে সাড়া দিতে চান না।






জবাবে জামায়াত প্রতিনিধি ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান নেই বললে খালেদা জিয়া বলেন, ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় না হলেও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব অনেক।






এই বক্তব্যের পরই জোটের অন্য দলের শীর্ষ নেতারা জানান, জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার পক্ষে বিএনপি।তবে এজন্য বড় ধরণের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।






দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলার পেছনে এটাও অন্যতম কারণ। কারণ এখন পর‌্যন্ত বিএনপি প্রধান জামায়াত প্রসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এমনকি কোন প্রক্রিয়ায় কিভাবে জাতীয় প্লাটফর্ম তৈরি হবে তাও খোলাসা করেননি।






এজন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও নিজে থেকে কেউ এ নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্য গড়ার তাৎপর‌্য ও সরকারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার কড়া সমালোচনা করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন।






বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকলেও জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, নাগরিক ও কূটনৈতিক টিম করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী এরা সমান্তরালভাবে কাজ করবেন।






কারণ এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে ১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বেশ এগিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকাও এই প্রক্রিয়ায় ছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তা কোনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। সে কারণে এবার যাতে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় সেজন্য চিন্তাভাবনা করে সামনে চলতে চায় বিএনপি।






জানা গেছে, রাজনৈতিক টিম আওয়ামী লীগসহ সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলের কাছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঐক্যের আহ্বান তুলে ধরবে। সবাইকে পৃথকভাবে দেয়া হবে চিঠি। পাশাপাশি একই প্লাটফর্মে থেকে সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে মতামত নেয়া হবে। নাগরিক টিম দেশের বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে এবং তাদের কাছেও খালেদা জিয়ার আহ্বান তুলে ধরা হবে।






দলের কূটনৈতিক টিম ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলবেন। এই তিনটি টিম আগামী একমাস অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।






জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। টিমগুলোর কাজ শেষ হলে খালেদা জিয়া ঢাকায় জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেবেন। আগামী মাসের শেষদিকে কনভেনশন করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা দলীয় সূত্রে জানা গেছে।






এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডন থেকে ফিরলে এ বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।আর দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব না পেলে এ ইস্যুতে তৎপরতা চালানো বা কাজ করা কঠিন।’






বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ম্যাডাম সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্যদের সঙ্গেও কথা বলবেন। এরপর ঐক্যের সার্বিক বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে। তবে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।’






(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/বিইউ/ডব্লিউবি)