logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
আটমাস কারাবন্দী ইকবাল র‌্যাবের তালিকায় ‘নিখোঁজ’
রফিকুল ইসলাম, রংপুর থেকে
২১ জুলাই, ২০১৬ ১১:৫০:০৬
image




রংপুর: রংপুরে নারী নির্যাতন মামলায় কারাবন্দী একজনকে নিখোঁজ দেখানো হয়েছে র‌্যাবের ‘সাম্প্রতিককালে নিখোঁজ’ এর তালিকায়। এ কারণে ওই যুবকের স্বজনরা পড়েছেন বিপাকে। কারণ, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ‘নিখোঁজ’ ইস্যুটি এখন দেশজুড়ে আলোচিত বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে এই নিখোঁজরা গোপন তৎপরতায় জড়িত এবং এ কারণে তাদের স্বজনরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবেও চাপে আছেন।



গত মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকা প্রকাশের পর ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই তালিকা প্রকাশ হয়েছে মূলত বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি বা স্থানীয় কোনও সূত্রে খবর পেয়ে। তালিকা প্রকাশের আগে এই কথিত নিখোঁজের বিষয়ে তেমন কোন খোঁজখবরও করেনি বাহিনীটি। ফলে তালিকায় থাকা মানুষদের একটি অংশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।



র‌্যাবের ২৬২ জনের তালিকায় রংপুরের মো. ইকবালের নাম আছে ১৬৩ নম্বরে। তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২০। ঢাকাটাইমসকে অনুসন্ধান বলছে গত বছরের শেষ দিকে নারী নির্যাতন মামলায় তাকে রংপুর কারাগারে পাঠায় জেলার একটি আদালত।



র‌্যাবের তালিকায় থাকা মোহাম্মদ ইকবালের বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। তার নিখোঁজের পর পরিবারের পক্ষ থেকে রংপুর কোতয়ালী থানায় গত ৯ এপ্রিল সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এর নম্বরও ৪১৯। কেবল এই তথ্যটিই জানানো হয়েছে র‌্যাবের তালিকায়।



পুুলিশ জানিয়েছে, রংপুরের মনোহরপুরের ইকবাল ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতেন। রংপুরের একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরে দুইজনই পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর ইকবালের নামে শিশু ও নারী নির্যাতন নামে মামলা করে মেয়েটির পরিবার।



গত বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এই মামলার পর ইকবালকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু এর কিছুই জানতে পারেনি ইকবালের স্বজনরা।



আর ছেলে ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার পর ইকবারের বাবা মো. মাহবুবুর রহমান গত ৯ এপ্রিল রংপুর কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কারাগারে পাঠানো এক আসামির পরিবারকে তার বিষয়ে কেন জানানো হয়নি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর কোতয়ালী থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তখন এখানকার দায়িত্বে ছিলাম না, তাই তখন কী হয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে ইকবালের বাবা জিডি করার পর তার বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তার কারাগারে অবস্থানের বিষয়ে জানতে পারি এবং তার বাবাকে তা জানানো হয়।



পুলিশের দেয়া এই তথ্য যাচাই করতে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইকবালের বন্দি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেল সুপার আবদুল কুদ্দুস। ইকবালের সঙ্গেও কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘বিয়ে করার পর স্থানীয়রা আমাকে আটক করে এবং সালিশের নামে আমার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না চাইলে আমাকে পুলিশে দেয় তারা এবং এরপর থেকে আমি কারাগারে বন্দী’।



এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল জানান, র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় যে তার নাম উঠেছে তা তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার আগে শোনেননি।    



এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরে র‌্যাব-১৩ এর অপারেশন অফিসার দোলন মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নানা সূত্র থেকে নাম পেয়ে আমরা যাচাই বাছাই করছি’।  যাচাই বাছাইয়ের আগেই তালিকা প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই তালিকা স্থানীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়নি।



র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, তারা তালিকা প্রকাশ করেছেন এদের বিষয়ে আরও তথ্য জানতে এবং জনগণের কাছে তারা নিখোঁজদেও বিষয়ে তথ্যও জানতে চেয়েছেন।



ঢাকাটাইমস/২১ জুলাই/ডব্লিউবি