চট্টগ্রাম: স্বপ্ন ছিল ইমরান (২৭) বড় ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিল সে। কিন্তু কী থেকে যে কী হয়ে গেল, গত চার মাস আগে হঠাৎ উধাও ইমরান! অনেক খোঁজা-খুঁজি করেছি কোনো কাজ হয়নি। আমরা তখনই থানায় জিডি করেছি। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। গত কিছু দিন ধরে পুলিশ-র্যাব তাঁকে খুঁজছে। বলছে ইমরান নাকি জঙ্গি! কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না-এক নিঃশ্বাসে ঢাকাটাইমস প্রতিনিধিকে কাছে পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন ডাক্তার ইমরানের মা মুনিরা। তবে ইমরানকে নিয়ে অজানা আশঙ্কার কথাও বলতে ভুলেননি মুনিরা। গতকাল মঙ্গলবার নিখোঁজ ২৬১ জনের তালিকায় ইমরানের নাম রয়েছে ১২০ নম্বরে। আলাপে জানা গেল, পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই ইমরান ছিলেন ধার্মিক।
মুনিরা বেগম বলেন, ডাক্তার ইমরান হোসেন দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। তাদের বাবা আবদুস সাত্তার অনেক আগেই পরলোকে। ছোটবেলা থেকে পারিবারিক ঐতিহ্যে ধার্মিক ছিল ইমরান।
নিখোঁজ হওয়ার আগে ডাক্তার মুনিরার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে কি না জানতে চাইলে মুনিরা বলেন, সে রকম কোনো পরিবর্তন ইমরানের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। ইমরান পড়াশুনা শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্ন করছিল। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার ইমরান হোসেন হঠাৎ নিখোঁজ। বহু খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে আমরা নিকটস্থ আকবর শাহ থানায় জিডি করি (জিডি নং-১৩০৭)। কিন্তু খোঁজ মেলেনি ইমরান হোসেনের। এর পরও আর তাঁর সঙ্গে পরিবারের কারো কোনো যোগাযোগও হয়নি। পুলিশও এ ব্যাপারে কোন ভুমিকা রাখেনি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে শুরু হয় পুলিশের দৌড়ঝাঁপ।
মুনিরা এই প্রতিবেদককে বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর পুলিশ ও র্যাব ইমরানের খোঁজে কয়েকবার বাসায় এসেছিলেন। পুলিশ জানতে চেয়েছে, ডাক্তার ইমরান কোথায়, তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ আছে কি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব বক্তব্যে আমাদের সবার ওপর একটা মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ডাক্তার ইমরানের ভাই সোহরাব একই মন্তব্য করেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইমরানের নিখোঁজের সঙ্গে পুলিশের এই জিজ্ঞাসাবাদে আমরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও শঙ্কিত।
শুধু ডাক্তার ইমরান হোসেন (২৭) নয়, চট্টগ্রাম মহানগরী ও সীতাকুন্ড এলাকার আকবর শাহ থানাধীন আরও ৪ জন র্যাবের নিখোঁজ তালিকায়। এরা হচ্ছে- আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী প্রশান্তি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা হাসান কাউসার (২৫)। তার বাড়ি সীতাকুন্ড থানার উত্তর বগাছতর সমতখা ভুঁইয়া বাড়ি এলাকায়। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। তার বাবা মো. নুরুন্নবী ওইদিন নগরীর আকবর শাহ থানায় জিডি করেন। (নং-৭১১)
একইভাবে নিখোঁজ রয়েছেন আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলীর নুর হোসেনের ছেলে মিলাদ (৩২)। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। ১৮ই ফেব্রুয়ারি তারা বাবা আকবর শাহ থানায় জিডি করেন (নং-৮৯৫১)।
গত ১২ মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আকবর শাহ থানার ফিরোজশাহর ইকবাল খাঁনের পুত্র আসিফ ইকবাল (৩৪)। ১৫ ফেব্রুয়ারি তার বাবা আকবর শাহ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন। (নং-৭৪৭)।
একইভাবে র্যাবের নিখোঁজ তালিকায় পাহাড়তলি থানায়ও ৮ জনের নাম রয়েছে।
নিখোঁজদের সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আমিরুল্লার ঢাকাটাইমসকে বলেন, র্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকায় নিখোঁজদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে র্যাব সতর্কতা অবলম্বন করেই এগোচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/ ২০ জুলাই/ আইখ/ এআর/ ঘ.)