ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনে দুই দফা ব্যর্থতার পর অনেকটাই ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে যাওয়া জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির ছাত্র সংগঠনটি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আটকও করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গুলশানে অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর দেশজুড়েই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। খোদ পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদেরকে। আরও হামলা হতে পারে- এমন প্রচার চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে হিন্দু পুরোহিতকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, এই পরিস্থিতিতে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনাও করছে সংগঠনের কর্মীরা।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় শিবিরের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুই নেতাসহ ২০ জনকে আটক করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরক ও ধারালো অস্ত্র।
পুলিশের খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, শিবির কর্মীরা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন তথ্য ছিল তাদের কাছে। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়।
একই দিন কুষ্টিয়ায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবির নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাস থেকে আটক করা হয় নয় জনকে। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানেও শিবির কর্মীরা নাশকতার চেষ্টা করছিল।
একই দিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন স্থানীয় শিবির নেতা সাইফুল ইসলাম মামুন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, রাতে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের চারমাইলে পুলিশের একটি টহল দলের ওপর বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এর পর দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হন সাইফুল।
পুলিশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক দুটি আলোচিত হত্যায় শিবিরের সম্পৃক্ততার তথ্য না পেলেও এর আগে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনায় এই ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যায় ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার শিবির নেতা এনামুল হককে আটক করে পুলিশ। পরে তিনি এই হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন।
পুলিশের খুলনা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক এস এম মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাসীরাই বর্তমানে ভোল পাল্টে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন জীবনযাত্রাকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে তারা। কিন্তু আমরা তাদের সে চেষ্টা সফল হতে দেবো না’।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, কেবল সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা নয়, দেশজুড়ে সন্ত্রাস-নাশকতায় বরাবরই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা জড়িত। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতাদের বিচার বন্ধ করতে এর আগেও পেট্রলবোমা হামলা বা গুপ্তহত্যায় জড়িত ছিল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িতদের সঙ্গেও তাদের অবশ্যই যোগাযোগ আছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপরাধ) জহিরুল ইসলাম ভুঁইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শিবির বা অন্য কোনও সংগঠন যদি পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়, তাহলে তাদেরকেও কঠোর হাতে দমন করা হবে’।
(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এমএম/ডব্লিউবি)