ঢাকা: র্যাব দেশব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে সাম্প্রতিককালে নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম থাকাদের অন্তত একজন নিখোঁজ নন। তার নাম ছানাউল্যা। ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং পরদিনই তিনি ঘরে ফেরেন। এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তখন পুলিশ এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেনি। ফলে তিনি যে বাড়ি ফিরেছেন সেই তথ্যও জানেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর পুরনো সেই সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরেই সানাউল্যাহর নাম নিখোঁজদের তালিকায় তুলে ধরেছে র্যাব।
সম্প্রতি জঙ্গি তৎপরতায় নিজেদের সম্পৃক্ততার প্রবণতা বাড়ছে তরুণদের মাঝে। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িত জঙ্গিরা পলাতক ছিলেন বলে জানা যায়। এরপর সারাদেশে আরও অনেক তরুণ নিখোঁজ বলে খবর বেরিয়ে আসে। এতে উদ্বেগ বাড়ে অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের। নিখোঁজ কয়েকজনের ছবি দিয়ে ইতোমধ্যে টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দারা নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করছে বলেও জানিয়েছে সরকার। আর গত মঙ্গলবার রাতে এমন একটি তালিকা প্রকাশ করে র্যাব। ২৬২ জনের ওই তালিকায় ৪৩ নম্বরে আছে ছানাউল্যার নাম। তালিকায় তার বাবার নাম লেখা হয়েছে জনৈক মাওলানা তাজুল। স্থায়ী ঠিকানা লেখা হয়েছে: সাং চিলারচর, থানা হাজীগঞ্জ, জেলা চাঁদপুর। বর্তমান ঠিকানায় লেখা হয়েছে, ১৭ মধুবাগ, রমনা, ঢাকা।
র্যাবের তালিকায় ‘নিখোঁজ’ ছানাউল্যা রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি মুদির দোকান চালান। ওই তালিকায় নামের পাশে ছানাউল্যাহর ফোন নম্বরও দেয়া আছে। সেই নম্বরে যোগাযোগ করলেই তার প্রকাশ্যে থাকার তথ্য জানা যায়।
ঢাকাটাইমসকে ছানাউল্যা জানান, ২০০৯ সালে সৌদি আরবে যান তিনি, ফেরেন ২০১২ সালে। এসে ১০৫, নয়াটোলায় তাজ জেনারেল স্টোর নামে মুদির দোকান দেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে (তারিখ মনে করতে পারছেন না তিনি) পাশের দোকানে বিকাশে টাকা পাঠাতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় একটি মাইক্রোবাসে করে আসা কয়েকজন লোক ঠিকানা জানতে তার হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন। চিরকুটটি পড়ার সময় মুখে কিছু একটা স্প্রে করে। জ্ঞান ফেরার পর তিনি একটি বাঁশের বেড়ার ঘরে নিজেকে দেখতে পান। এই ঘরের চারপাশেই ছিল পানি। বেড়া ভেঙে তিনি বের হয়ে মূল সড়কে চলে আসেন।
ছানাউল্যা জানান, স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারেন, ওই এলাকার নাম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। পরে একটি বাসে করে ঢাকায় ফিরে আসেন।
ছানাউল্যার অন্তর্ধানের পর তার বাবা মগবাজার টিঅ্যান্ডটি মসজিদের খতিব মো. তাজুল রমনা থানায় গত ৫ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়রি করেন। তাতে তিনি জানান, ৪ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়েছে তার ছেলে। আর ৬ জানুয়ারি সানাউল্যাহ বাড়ি ফিরলেও এ বিষয়ে থানায় আর কিছু জানাননি তাজুল বা ছানাউল্যা। আর পুলিশও সে সময় ওই সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে কোনও তদন্ত বা অনুসন্ধান চালায়নি।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু মানুষের নিখোঁজের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর পুরনো সেই সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে সানাউল্যাহর বাসায় আসে পুলিশ। কিন্তু তাকে সেখানেই দেখতে পান কর্মকর্তারা। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে ছানাউল্যার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। তার মোবাইল ফোন নম্বর খোলা রাখা এবং থানা থেকে ডাকলে যাওয়ার কথা বলে চলে যান তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা।
ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে একজন ব্যক্তির নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করার পর তখন এ নিয়ে অনুসন্ধান না চালানোর বিষয়ে রমনা থানা পুলিশের আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।
ছানাউল্যা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বা বাবার ভুল হয়েছে থানাকে না জানানো। আসলে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। এখন বিপদে পড়েছি। কদিন পর পর যখন তখন পুলিশ আসে’।
কেবল একটি সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে প্রকাশ্যে থাকা একজনের নাম নিখোঁজদের তালিকায় তুলে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের
গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিডিয়া-মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই তালিকার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, সিনিয়র স্যাররা এটা তৈরি করেছেন’।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ছানাউল্যার ফিরে আসার খবর তো তার পরিবার আমাদেরকে জানায়নি। তাদের অবশ্যই এই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো উচিত ছিল।
(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এএ/জেবি/ডব্লিউবি)