খোঁজ নেই, আবার নিখোঁজ নয়!
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২১ জুলাই, ২০১৬ ২৩:১৬:৪৭

ঢাকা: এস এম আহসান রুনেলের বাড়ি কুমিল্লায়। তার সন্ধান চেয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বড় ভাই আয়কর বিভাগের কমিশনার ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে আহসান ইচ্ছা করেই নিখোঁজ হন। তিনি শুধু তার ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। কিন্তু মা ও স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ঠিকই যোগাযোগ রাখছেন তিনি। ঈদের পরও তিনি বাড়িতে গিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এইচএসসি পাসের পর আহসান বিদেশে চলে যান। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ঘুরে ফিরে আসেন দেশে। ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ভাইদের কাছ টাকা চান তিনি। বড় তিন ভাই আহসানকে ব্যবসা করার জন্য ২২ লাখ টাকা দেন।
ব্যবসার একপর্যায়ে আহসানের কাছে টাকার হিসাব চাইন বড়ভাই আয়কর কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম। এরপরই নিরুদ্দেশ হন আহসান।
গত ২ ফেব্রুয়ারি আহসানের সন্ধান চেয়ে রমনা থানায় জিডি করেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু গত আট মাসে এ ব্যাপারে কোনো খোঁজ নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আট মাস পর র্যাবের নিখোঁজের তালিকায় মেলে আহসানের নাম।
সম্প্রতি জঙ্গি হামলায় দেশব্যাপী আলোড়ন উঠলে এবং সরকার নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য জানতে গত সপ্তাহে জাহাঙ্গীর আলমের আইনি চেম্বার কাকরাইলে যায় র্যাব। তার কাছ থেকে তথ্য নেন। তারা জানতে পারেন আহসান নিখোঁজ নন। তবে ঢাকার ঠিকানা অজানা। তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান ড. জাহাঙ্গীর।
এ সম্পর্কে ড. জাহাঙ্গীর আলম বুধবার ঢাকাটাইমসকে তার চেম্বারে বসে জানান, “পারিবারিক কারণে ছোট ভাই আহসানের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছিলাম। আমরা পরিবার থেকে কয়েক ভাই মিলে তাকে ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু সেই টাকার কোনো হিসাব দেখাতে পারেনি সে। হিসাব দেখতে চাওয়ার পর থেকেই সে নিরুদ্দেশ। এ কারণে জিডি করেছিলাম।
ড. জাহাঙ্গীর আরও জানান, “আহসান আমাদের ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও গ্রামের বাড়িতে মা ও স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ঢাকার ঠিকানা সে কাউকে দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা তার সন্ধান চেয়েছি।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা জিডি করলাম ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু আট মাস পর মনে পড়ল এটির খোঁজ নেয়া দরকার। আর আমাদের ভাই তো ওই অর্থে নিখোঁজ নয়। তাহলে র্যাবের তালিকায় কেন তার নাম। এটি ভালো করে তদন্তই করেনি তারা।”
এ সময় ড. জাহাঙ্গীর তার মায়ের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা বলিয়ে দেন। আহসানের মা জানান, ঈদের আগে এবং পরে আহসান বাড়িতে গেছে। তার সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু ঢাকার বাসার খবর জানেন না কেউ।
এক প্রশ্নের জবাবে সদ্য অবসরে যাওয়া এই আয়কর কমিশনার জানান, “আমার ভাইয়ের ঢাকার ঠিকানা জানার জন্য আমি র্যাবকে বলেছি। কিন্তু তারা তা দিতে পারছে না। তবে আমি বিশ্বাস করি সে জঙ্গি বা এ জাতীয় কোনো কাজে নেই আহসান। তবে পরিবার থেকে যে টাকা পয়সা সে নিয়েছে সেটি না দেয়ার জন্য সে তালবাহানা করছে। হয়তো অন্য কোনো কাজে সে এই টাকা নষ্ট করেছে। এ জন্য সে লুকোচুরি করছে।’
জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমাদের কাছে এ রকম অনেক জিডি আছে। গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা এসব তদন্ত করে থাকি। তবে যারা নিখোঁজ আছেন তারা বিভিন্ন কারণে নিখোঁজ হতে পারেন।” তবে আহসানের বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি।
(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এমএম/এইচআর/মোআ)