logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
‘তাদেরকে খুঁজে বের করা পুলিশেরই নৈতিক দায়িত্ব’
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
২৫ জুলাই, ২০১৬ ১১:১০:২০
image




ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে গোয়েন্দারা আটক করেছে বলে অভিযোগ করছেন তাদের স্বজনরা। তবে অস্বীকার করছে পুলিশ। এদের একজনের আটকের বিষয়টি আবার স্বীকার করছে স্থানীয় থানার কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন স্বজনরা। দুই জনের স্বজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হোক, কিন্তু অবস্থান সম্পর্কে জানার অধিকার আছে তাদের।



স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই তিন জন কোথায় আছেন- কী করছেন, সে বিষয়ে অনুসন্ধান বা তদন্তে কেনো উদ্যোগ নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।



হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরেই সপরিবারে ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত আর করিম। জঙ্গিরা ২০ জনকে হত্যা করলেও তার পরিবারের কোনো সদস্যকে কিছুই বলেনি। ওই ঘটনায় আর্টিজানের ভেতরকার ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সহযোগী বলেই সন্দেহ করছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। আর্টিজানে থেকেও বেঁচে ফেরা কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়েও সন্দেহের কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শেষে গোয়েন্দারা এই দুইজনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের স্বজনরা।



আবার হামলার তিন সপ্তাহ পর সন্দেহভাজন এক নারীকে নরসিংদী থেকে গোয়েন্দারা আটক করেছে বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। ওই হামলার ঘটনায় বাইরের সিসি ক্যামেরার যে ফুটেজ র‌্যাব প্রকাশ করেছে তাতে ওই নারীকে দেখা গেছে বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে যথারীতি গোয়েন্দারা অস্বীকার করেছেন।



মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা কেবল অস্বীকার করে দায় এড়াতে পারেন না। গোয়েন্দারা তুলে না নিলে কারা নিয়েছে তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়াও পুলিশের দায়িত্ব।



হলি আর্টিজানে কমান্ডে অভিযান শেষে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হলেও দুই জনকে ফিরে পায়নি তাদের পরিবার। এরা হলেন হাসনাত করিম ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ। এই দুই ঘটনায় এই দুইজন সন্দেহভাজন-বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এই দুইজন জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে আছে-এটাও বলেছেন তিনি।  



হাসনাত করিমের বাবা রেজাউল করিম গত শনিবার বিকালেও ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, তার ছেলে পুলিশের হেফাজতেই আছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ছাড়েনি। আমি আগেও এ কথা বলেছি। এখনও বলছি’।



ছেলের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিÑজানতে চাইলে হাসনাত করিমের বাবা বলেন, ‘তারা তো আমার সঙ্গে কথাই বলতে চায় না। আমি গেলে পাত্তাই দেয় না, কথা বলতে চায় না’।



ছেলের জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও কথা নেই রেজাউল করিম। তবে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও তিনি পিছিয়ে এসেছেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু শুভানুধ্যায়ীরা বলেছেন আপাতত সংবাদ সম্মেলন না করতে’।



নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০১২ সালে হাসনাত করিমকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর্টিজানে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলামও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই দুইজনের মধ্যে সখ্য ছিল বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।



অন্যদিকে কানাডা থেকে তাহমিদ দেশে ফেরেন আর্টিজান হামলার আগের দিন। দেশে আসার পর দিনই তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন বলে তার স্বজনরা বলছেন।



তাহমিদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চেয়ে কানাডার গ্লোবার অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী স্টেফানে ডিওনের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছে তার পরিবার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডোর সহায়তাও চেয়েছ তারা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক টরোন্টো স্টার জানিয়েছে, এই তরুণের অবস্থান জানতে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কানাডা।



সবশেষ গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর শিবপুরের রুমা আক্তারকে আর্টিজান হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করার কথা জানিয়েছেন তার বাবা। এ বিষয়ে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ইমাম হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি লোক মুখে শুনেছি ওই গ্রাম থেকে রুমা নামে এক নারীকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তা আমাদেরকে জানানো হয়নি’।



গুলশানের ঘটনার দুইমাস আগে রুমা দুবাই থেকে আসেন। তিনি নতুনবাজার এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন এবং গুলশানের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। আটক রুমা মানসিকভাবে অসুস্থ বলেও জানান তার স্বজনরা।



রুমার বোন সাবিনা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বোন পুলিশের কাছেই আছে। তবে আমরা এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে পারিনি’।



তবে রুমাকে আটকের অভিযোগও অস্বীকার করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা রুমা, হাসনাত বা তাহমিদকে গ্রেপ্তার করিনি। এরা কোথায় আছেন তাও আমাদের জানা নেই’।



দেশের তিনজন নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন, এদের উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে-জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা যে নিখোঁজ রয়েছেন সে ব্যাপারে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কেউ কি জিডি বা মামলা করেছেন? না করলে পুলিশ কীভাবে এেেদর উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবে?’



তবে এমন বক্তব্য দিয়ে পুলিশ দায় অস্বীকার করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান। ঢাকাটাইমসকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক বলেন, ‘এটা সত্য যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদেরকে তাদের হেফাজতে নিয়েছিল। এখন তাদেরকে খুঁজে বের করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব’।



ঢাকাটাইমস/২৫ জুলাই/এএ/ডব্লিউবি