ঢাকা: রাজধানীর কল্যাণপুরের আস্তানায় পুলিশ অভিযান শুরুর পরও মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিল না জঙ্গিরা। বরং পুলিশকে বারবার তারা বলেছে, মরতে প্রস্তুত তারা। ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’- এমন স্লোগানও তারা বারবার দিয়েছে।
কল্যাণপুর ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়ির পাঁচ তলা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিল জঙ্গিরা। ছয় তলার ওই ভবনটির নাম তাজ মঞ্জিল। স্থানীয়ভারে জাহাজ বিল্ডিং নামেই পরিচিতি ছিল এর। এর তিন তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত মেস হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন আতাহার উদ্দিন আহম্মেদ। তাৎক্ষণিকভাবে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জঙ্গিদের ওপরের ফ্লোরে তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকে নয় জন শিক্ষার্থী। রাজধানীতে একটি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েন এদের একজন। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে তার। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
ওই শিক্ষার্থী জানান, তাদের নিচতলায় জঙ্গি আস্তানা থাকলেও ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি তারা। বলেন, ‘এদের কারও সঙ্গে কোনদিন কথাবার্তা হয়নি। তারা কারও সঙ্গে মেশার আগ্রহ দেখাতো না। কী করতো না করতো তা জানার কোনো সুযোগ আমাদের ছিল না’।
ওই শিক্ষার্থী জানান, রাতে পড়াশোনা শেষ করে ঘুমাতে যেতে ১২টা বেজে যায় প্রায় প্রতিদিন। গত রাত একটার দিকে কয়েকটি গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। এরপর সারা রাত ধরেই জঙ্গিদের নানা স্লোগান ও গোলাগুলির শব্দ পেয়েছেন তারা। তবে গুলি কোত্থেকে আসছে, সেটা বোঝার উপায় ছিল না।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই শুনি জঙ্গিরা আল্লাহু আকবার স্লোগান দিচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট শুনলাম, চিৎকার করে তারা পুলিশকে বলছে, এই তাগুদি সরকার বেশিদিন থাকবে না, আমাদেরই জয় হবে’। আর বারবার তারা বলছিল, ‘আমরা মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’।
মধ্যরাতে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে বাসাটি ঘিরে রাখে। তবে রাতে ক্রসফায়ার বা গোলাগুলির মাঝে পড়ে যেন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি না হয়, সেজন্য অভিযান শুরু করে ভোর হওয়ার পর। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে শুরু হওয়া অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স চলে এক ঘণ্টা।
তবে পুলিশের এই সাবধানতার কথা জানতো না ওই ভবনের অন্য ফ্লোরের বাসিন্দারা। তাই তাদের মধ্যে ছিল আতঙ্ক, উদ্বেগ। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সারারাত থেমে থেমে গুলি চলেছে আর উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটিয়েছি, আমাদেরকে জঙ্গিরা জিম্মি করে কি না, ভুল করে পুলিশ আবার আমাদের ওপর হামলা করে কি না। এখনও দুশ্চিন্তায় আছি।’
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘মনে হচ্ছে এখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, গুলিটা কে করছে সেটা বোঝার উপায় ছিল না। বাইরে বের হলেই গুলি লাগে কি না, বা ঘরেই গুলি চলে আসে কি না ভেবে আতঙ্কিত ছিলাম’।
তাজ মঞ্জিলের পাশের ভবনের এক বাসিন্দার বর্ণনাও ছিল প্রায় একই রকম। ওই বাসিন্দাও নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন তিনি। বলেন, ‘মধ্যরাতের পর থেকেই থেমে থেমে গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। জঙ্গিদের স্লোগান স্পষ্টই শোনা যাচ্ছিল। আমরা টেলিভিশন আর অনলাইন মিডিয়ায় চোখ রেখেছি। জানার চেষ্টা করছি কী হচ্ছে, কিন্তু কোথাও তথ্য পাইনি। সকালে উঠে জানলাম সব’।
এদিকে অভিযানের শেষে পুলিশ তাজ মঞ্জিলের পাশেপাশের সব গলিতে পাহারা বসিয়েছে। কাউকে গলি দিয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। সকালে যারা বাইরে বের হয়েছিলেন, তারাও এখন ঘরে ঢুকতে পারছে না।
এক নারী জানান, তিনি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন তিনি এখন বাসায় যেতে পারছেন না।
সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝতেই পারছেন, এমন অবস্থায় কিছুটা বিড়ম্বনা হতেই পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদেরকে এমনটি করতেই হবে’।
ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি