ঢাকা: জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সব জেলায় কমিটি গঠন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। খোদ রাজধানী, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জেলাতেই হয়নি এসব কমিটি।
জঙ্গিবিরোধী প্রচারে এসব কমিটির কার্যকারিতা কতটুকু-এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আওয়ামী লীগের এই ব্যর্থতাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বিব্রত-বিরক্ত।
গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারি ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে শুরু হয় প্রচার। এর অংশ হিসেবে সমাজের গণ্যমাধ্য ব্যক্তি ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়কে।
এতে আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের নেতারা ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতদের অন্তর্ভুক্তির এবং তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। কোনো এলাকায় কারও বিষয়ে সন্দেহ থাকলে বা কেউ নিখোঁজ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর কথাও জানানো হয় নির্দেশে।
২১ জুলাই নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠন না হওয়ায় ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী বৈঠকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কার্যক্রম দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পৃক্ত হয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখারও নির্দেশ দেন তিনি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরও কমিটি গঠনে অগ্রগতি নেই।
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আগস্ট মাসের দোহাই দিচ্ছে জেলার কোনো কোনো নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। কিন্তু আগস্ট শোকের মাস। এ মাসে আওয়ামী লীগ কোন কমিটি গঠন করে না। তাই এ মাস শেষ হলেই আমরা আমাদের কমিটি ঘোষণা করবো।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এখন উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ত। এ বিষয়ে ঢাকায় ফিরে কথা বলবো’।
ব্যর্থ ঢাকা মহানগরের দুই কমিটিও
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কমিটি হয়নি খোদ রাজধানীতে। কমিটি কখন হবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন নি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করছি শিগগিরই এ কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এই কমিটি গঠন শেষ হলেই আমরা নগর কমিটি নিয়ে কাজ করবো।’
ব্যর্থ আশরাফের কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগও
কমিটি গঠন হয়নি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জেলা কিশোরগঞ্জেও। জেলার নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশের পরেই কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হলেও তা কখন গঠিত হবে এ বিষয়ে কোন খবর নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাকাউদ্দিন আহাম্মদ রাজন ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ পাওয়ার আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠনের শুরু করেছি। এই কাজ চালু আছে।’
যেসব জেলায় কমিটি হয়নি
চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, সিলেট মহানগর ও জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, রংপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, নাটোর, শেরপুর, শরীয়তপুর, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, বাগেরহাট, কুষ্টিয়াও কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা।
এসব জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে না হলেও কমিটি গঠনের কাজ চালু আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ফেনী আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছে, ওই জেলায় কমিটি করা যাচ্ছে না জেলা হাইকোর্টে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন হাজারীর প্রতারণা মামলার কারণে। ঘোষিত সাজা না খেটেই তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন- এমন অভিযোগে হাইকোর্টে শুনানি চলছে। ফেনী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নিজাম হাজারী এই মামলার জন্য ঢাকায় থাকায় তার কাছ থেকে কোন নির্দেশনা পাননি।
তবে নিজাম হাজারীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলায় কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছি। এটা শেষ হলেই আমরা জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করবো।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, জেলা সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রভাবে কারণেই এখনও জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না। জেলার সর্বত্রই তার পরিবার প্রভাব বিস্তার করে। এ কমিটি গঠন হলে তিনি আবারও প্রভাব বিস্তার করবেন এমন আশঙ্কায় কমিটি গঠনে আগ্রহী নন জেলার নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ আউয়াল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এর সবই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। কমিটির কাজ চালু আছে’।
খুলনায় মহানগর ও জেলা কমিটি হলেও উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে এখনও কমিটির কাজ শেষ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/টিএ/ডব্লিউবি)