logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
এই দুর্যোগেও কিস্তির জন্য এনজিওর চাপ
রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
০৯ আগস্ট, ২০১৬ ০৯:২২:৫৭
image




প্রায় এক মাস ধরে বন্যায় ভাসছে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানিতে ডুবে গেছে ফসল, নিচু এলাকায় বাড়িতেও থাকতে পারছে না মানুষ। দুর্গত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বা কাজের সংকট থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে আয়। আশ্রয়ের খোঁজে, খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে দুর্গতরা। তিন বেলা খাবার যোগাতেই যখন সাহায্যের দিকে তাকিয়ে মানুষ, সেই অবস্থাতেও দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি।



জরুরি প্রয়োজনে বা আয়বর্ধক কোনো কাজে অর্থায়নের জন্য ঋুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ নিয়েছিলেন দুর্গতরা। প্রতি সপ্তাহেই শোধ করতে হয় এই ঋণের কিস্তি। কায় থাকলে এই কিস্তি দেয়া তেমন কোনো ঝামেলা হয় না বেশিরভাগ মানুষের কাছেই। তবে টাকার যোগান বন্ধ হয়ে গেছেই পড়তে হয় বিপাকে।



কেউ কেউ কিস্তি দিতে জমানো টাকা ভাঙছে, কেউ বা ধারদেনা করছে, কেউ বা আবার একটি এনজিওর ঋণ পরিশোধে অন্য একটিও থেকে ধার নিচ্ছে। এতে একটি সংস্থার ঋণ পরিশোধ হলেও আসলে বেড়ে যাচ্ছে ঋণ।



ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায়ে নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় কর্মীরা নির্দেশনা না থাকায় চাকরির স্বার্থেই জোর জবরদস্তি করে যাচ্ছে।



টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরের বাসিন্দা অভিজিৎ ঘোষ। বন্যায় তার ঘর-বাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। এই অবস্থাতে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাংক। মানবেতর জীবন যাপনের মধ্যেও গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মী কিস্তির টাকার জন্য চার বার তাগাদা দিয়ে গেছেন অভিজিৎকে।



ঢাকাটাইমসকে অভিজিৎ বলেন, ‘বন্যায় সবি গেছে, ঘর নেই, খাওয়ন নাই, কোনো মতে চলছে জীবন।  এরমধ্যে কোথায় পাবো কিস্তির টাকা।’



গত সপ্তাহেও গ্রামীণ ব্যাংকের ভুঞাপুরের গোবিনদাসী শাখার মাঠ কর্মী অভিজিতের কাছে ভিন কিস্তির টাকা তুলতে। টাকা না দিলে ভবিষ্যতে আর ঋণ দেয়া হবে না-এমন কথাও বলে এসেছেন কর্মকর্তারা। 



বন্যার সময় কেন এভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে ওই মাঠ কর্মী ঢাকাটাইমসকে জানান, কিস্তির টাকা না তোলার বিষয়ে তাকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ কারণে তাকে টাকা তুলতে যেতেই হবে।



এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুয়াপুর উপজেলার গ্রামীণ ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আব্দুল খালেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এরকম চাপ তো দেয়ার কথা না। তবে আমরা কিস্তি তোলা বন্ধ করিনি। জিপিএস (সঞ্চয়) টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ঋণ গ্রহীতারা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতেছে।  এ কারণেই হয়তো ওই কর্মী কিস্তির জন্য গেছে।’



জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তবে কে এই সময় কিস্তির টাকা আনতে গেছে আমাকে বলেন, এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’



এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বন্যা একটি জাতীয় দুর্যোগ। মানুষ খেতে পারছে না। ঋণ কিভাবে দেবে। এজন্য আবার নির্দেশনা লাগে নাকি। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। পারলে তারা আরও ত্রাণ ও অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করবে। তা না করে উল্টো কিস্তির টাকার জন্য চাপ।’



তবে কিস্তির জন্য কেবল গ্রামীণব্যাংক নয়, চাপ দিচ্ছে সব কটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। আবার কেন টাঙ্গাইল নয়, আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, বন্যা উপদ্রুত সব এলাকাতেই আগের মতই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে দুর্গতদেরকে। অথচ ঋণ নিয়ে আয়বর্ধক কর্মকা- বন্ধ হয়ে গেছে পুরোপুরি।



প্রতিবার বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে দুর্গত এলাকায় কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিলেও এবার ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। 



অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ এফ মুজতাহিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বন্যার সময় কিস্তির টাকা আদায় জাতীয়ভাবে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রাখতে হবে। তখন সুদও বন্ধ রাখতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বন্যার পরে তদন্ত করতে হবে। তারপর এনজিওগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন থেকে তারা কিস্তি নেয়া শুরু করবে।’



এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন  ঢাকাটাইমসকে বলেন,  বন্যার সময় এনজিও গুলোতো স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ রাখে।  এটা তো জাতীয় ইস্যু। সুতরাং এসব ইস্যু নিয়ে তো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনার দরকার নেই।



প্রতি বছর বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজে থেকেই তো ঋণ আদায় স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়, এবার এমনটি কেন করা হয়নি- জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। আসলে ব্যবস্থা নেবো।



(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/প্রতিনিধি/এমএম/ডব্লিউবি)