logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
কল্যাণপুরের নয় জঙ্গি বিপদে ফেলেছে ঢাকা মেডিকেলকে
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৬ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:১১:১৪
image




ঢাকা: কলাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত নয় জঙ্গির মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২৬ জুলাই অভিযানের পর থেকে এই হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজে তাদের মরদেহ রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে জায়গা সংকট রয়েছে।



হাসপাতাল মর্গের চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগী মারা যায়। এ ছাড়া নানা দুর্ঘটনা বা সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের পর মরদেহ আনা হয় হাসপাতাল মর্গে। এসব মরদেহ যেন পঁচে না যায় সে জন্য ফ্রিজে রাখতে হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে ফ্রিজে মরদেহ রাখার সুবিধা আছে ১২টি। কল্যাণপুর অভিযানের পর নয়টিই বরাদ্দ দিতে হয়েছে জঙ্গিদের। এই অবস্থায় নতুন মরদেহ আসলে ময়নাতদন্ত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য।



ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে লাশ রাখার মত পর্যাপ্ত স্থান নেই মর্গের ফ্রিজে। এ কারণে নয় জনের মরদেহ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমরা কিছু করতে পারছি না।’



এই চিকিৎস জানান, নয় জঙ্গির মরদেহের ডিএনএ, ভিসেরাসহ সব আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কোন সংস্থা এসব আলামত বা নমুনা চাইলে তা দ্রুত সরবরাহ করতে পারবেন তিনি।



তবে পুলিশ বলছে, হাসপাতাল মর্গে জায়গার সংকট থাকলেও এ বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই। কারণ, কেউ মরদেহ নিতে এখন পর্যন্ত আবেদন করেনি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার ইউসুফ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারও পরিবার যদি মরদেহ নিতে আসে তাহলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো জঙ্গির মরদেহ নিতে চাইলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে তাদের কাছে আবেদন করতে হবে।



আর কেউ যদি আবেদন না করে?- ইউসুফ আলী বললেন, ‘সে ক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’



পুলিশ জানায়, কেউ আবেদন না করলে মরদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে মামলার নিস্পত্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।



মরদেহ নিতে আসেনি কেউ



হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিদের মতো কল্যাণপুর আস্তানায় নিহতদের মরদেহ নিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না স্বজনরা। এই অভিযানের পর পুলিশ নিহত জঙ্গিদের নাম প্রকাশের পর এদের কোনো কোনো স্বজন দেখতে এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু মরদেহ নিতে কেউ পুলিশের কাছে আবেদন করেননি।



পুলিশ বলছে, নিহতের মরদেহ নিতে তাদের স্বজনরা যোগাযোগ করেনি এখনও।



কেবল কল্যাণপুর অভিযানের ক্ষেত্রে নয়, জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মরদেহ নিতে স্বজনরা অস্বীকার জানিয়েছেন আগেও। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত সবার পরিবারই তাদের সন্তানদের পরিণতির কথা জেনেছেন। কিন্তু এদের মধ্যে ঢাকার তিন জন জানিয়ে দিয়েছেন, মরদেহ নিতে আগ্রহ নেই তাদের। আর বগুড়ার দুই জনের স্বজনরাও পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনো আবেদন করেননি। এই অবস্থায় মরদেহ এখনও পড়ে আছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মর্গে।



৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাতের অদূরে পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলার সময় নিহত জঙ্গি আবীর রহমানের মরদেহও নিতে রাজি হননি তার বাবা। পরে পুলিশের তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জে সমাহিত হয়েছে মরদেহ। আর এ সময় একজন ইমাম ছাড়া আবীরের জানাজা পড়তেও রাজি হননি কেউ।



কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত কারও কারও স্বজনও জানিয়েছেন, সন্তানের মরদেহ নিতে চান না তারা। অভিভাবকরা বলেছেন, যে সন্তান পরিবার, সমাজ বা দেশের কথা চিন্তা না করে জঙ্গিবাদে লিপ্ত হয়েছে, সেই সন্তানের মরদেহ তারা দাফন করতে চান না। তাদের কী হবে এ নিয়ে মাথাব্যাথা নেই বলেও জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক।  



কল্যাণপুর আস্তানায় নিহত একজনের পরিচয় মেলেনি এখনও



কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত নয় জনের মধ্যে আট জনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও বাকি একজনের নাম-পরিচয় কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ।  



অভিযানের পর নিহতদের আবার আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে আট জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তবে বাকি অন্য একজন কে সে প্রশ্নের সুরাহা হয়নি এখনও।



পুলিশ বলছে নিহতরা হলেন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের আবদুল্লাহ, টাঙ্গাইলের মধুপুরের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার প্রকৌশলী তাজ-উল-হক রাশিক, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান, স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ নেতা মোনায়েম খানের নাতি আকিফুজ্জামান খান, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী সাজাদ রউফ অর্ক, নোয়াখালীর শিবির কর্মী জোবায়ের হোসেন এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রায়হান কবির।



পুলিশ বলছে, আট জঙ্গির পরিচয় যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পরিচয় একইভাবে নবম জনের নাম পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার আঙ্গুলের ছাপে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। তার ছবি দেখেও পুলিশের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।  



(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি)