logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
জাফরুল্লাহ চান, তারা চান না
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:১১:৫৮
image



ইদানীং বিএনপির পরামর্শক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সবশেষ পরামর্শে তিনি দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিএনপিতে সংশ্লিষ্ট করতে বলেছেন। এই পরামর্শ খালেদা জিয়া গ্রহণ করবেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনই জানা যাবে না। তবে জাফরুল্লাহ যাদেরকে বিএনপিতে নিতে বলেছেন তাদের প্রায় সবাই জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।






‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে, খোলা চিঠি-২’-এ জাফরুল্লাহ যাদের বিএনপিতে ‘কো-অপ্ট’ করতে বলেছেন তাদের মধ্যে আছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, বামপন্থি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, পারভীন হাসান, নারীপক্ষের শিরীন হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমদ, পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এস এ খান ও আইনুন নিশাত, চিকিৎসক অধ্যাপক এম আর খান ও এ কে আজাদ খান, অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেন ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক, সাবেক তিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সা’দত হুসাইন, আকবর আলি খান, শওকত আলী প্রমুখ।






জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া জানাননি খালেদা জিয়া। তবে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা।






দলটির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কমিটির বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা চেয়ারপারসনকে দেয়া হয়েছে। তাই এসব বিষয়ে তিনি যা করবেন, আমরা তা-ই মেনে নেব। তিনি চাইলে যে কাউকে দলে নিতে পারেন। আবার যে কেউ দলে আসারও আবেদন করতে পারেন। এসব বিষয় একমাত্র ম্যাডামই (খালেদা জিয়া) ভেবে দেখতে পারেন। আর কমিটিতে নতুন কোনো বিষয়, পদ-পদবি আনতে হলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করারও দরকার হতে পারে।’






তারা বিব্রত, বিরক্ত






জাফরুল্লাহ নাগরিক সমাজের যে সদস্যদের বিএনপিতে নিতে বলেছেন তাদের মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমসের। এদের মধ্যে একজন ছাড়া কেউ এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। এই ২৩ জনের মধ্যে অন্তত চারজন আছেন বিদেশে। বাকি সাত জনের মধ্যে চারজন ফোন ধরেননি। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।






যাদের সঙ্গে ঢাকাটাইমসের কথা হয়েছে তাদের বেশিরভাগ গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেছন। বলেছেন, তাদের সঙ্গে কথা না বলে নাম দেয়ায় বিব্রত হয়েছেন তারা। জাফরুল্লাহর ব্যাখ্যাও চেয়েছেন কেউ কেউ।






গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা যাদেরকে বিএনপিতে নিতে বলেছেন তাদের একজন সরকারি স্বায়ত্বশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-বিআইডিএসের অর্থনীতিবিদ বিনায়েক সেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। একজন মানুষকে এভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার কী মানে? কথা না বলে বা যোগাযোগ না করে এভাবে একজনের নাম দিয়ে দেয়ার অর্থ হয় না।’






আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেটসহ সরকারি আর্থিক নীতি নিয়ে নানা সময় সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়ে এসেছেন। তাকেও বিএনপিতে ‘কোঅপ্ট’ করতে বলেছেন জাফরুল্লাহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবে বিদেশ থেকে এসেছি। এখনও পত্রিকাটা ভালোভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। কিন্তু এটা বলতে পারি, আমার সঙ্গে কথা না বলে এমন একটা বিষয়ে নাম দেয়া উচিত হয়নি। আমি কোনো দলে যেতে চাই না।’






জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিঠিতে নিজের নাম থাকার বিষয়টিতে নাখোশ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ-সচিব আলী ইমাম মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা না বলে তিনি এ ধরনের লেখায় আমার নাম যুক্ত করতে পারেন না। আর আমি কখনো রাজনীতি করব না। করলে অবসরের পরপরই করতে পারতাম। কারও সম্পর্কে লিখতে হলে আগে তার সঙ্গে কথা বলতে হয়। কিন্তু তিনি তা করেননি।’






সাবেক মন্ত্রিপরিষদ-সচিব আকবর আলি বলেন, ‘আমি তো বিএনপি করি না। সুতরাং এমনটা বলার কোনো মূল্য নেই।’






আজীবন বামপন্থি রাজনীতি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তাকেও বিএনপিতে নিতে বলেছেন। যাবেক নাকি এই দলে?- জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘তিনি কী বলেছেন না বলেছেন, তাতে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমার কোনো আগ্রহও নেই।’






জাফরুল্লাহ যাদেরকে বিএনপিতে নিতে বলেছেন তাদের মধ্যে আছেন বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমার। নানা সময় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করলেও বিএনপিতে যাওয়ার বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন বদিউল। বলেন, ‘আমি সব সময় নিরপেক্ষভাবে থাকতে চাই। কখনো রাজনীতি করার ইচ্ছাও নাই। জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সঙ্গে  কোনো কথাও বলেননি।’






স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদও কোনো দলের কমিটিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তালিকায় নাম দেয়ার আগে উচিত ছিল আমাদের সবার সঙ্গে কথা বলা। কারণ এতে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে।’






জাফরুল্লাহ যাদেরকে বিএনপিতে নিতে বলেছেন তাদের একজন বারডেমের প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। এই প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মালুম, আমার নাম কিভাবে আসলো। আমি তো এই প্রস্তাবের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি রাজনীতি করি না, করার কোনো ইচ্ছাও নেই।’






বিএনপিতে যদি আপনাকে একটি পদ দিয়েই দেয় তাহলে কী করবেন- জানতে চাইলে এ কে আজাদ খান বলেন, ‘আমি বিনয়ী হবো। ম্যাডামকে বলবো আপনাকে থ্যাংকইউ। আমি রাজনীতিতে নেই।’






মন্তব্য করতেও আগ্রহী নন তারা






সাবেক মন্ত্রিপরিষদ-সচিব সা’দত হুসাইনের পরামর্শ নিতে তাকে বিএনপিকে কোঅপ্ট করতে বলেছেন জাফরুল্লাহ। ‘যাবেন নাকি এই দলে’ জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে সা’দত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’






ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বিএনপিপন্থি ও সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। জাফরুল্লাহর খোলাচিঠিতে আছে তার নামও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলতে চাই না।’






আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিককে তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কী করব, না করব, তা পরিস্থিতিই বলে দিবে।’






আগ্রহী কেবল দিলারা চৌধুরী






বরাবর আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচকদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক। ডানপন্থি ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মোর্চা সাদা দলের এই শিক্ষক নেতা জাফরুল্লাহর প্রস্তাবে বেশ আগ্রহী। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও অনেক সত্য কথা চিঠিতে লিখেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যেভাবে বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে অযোগ্য অনেক লোক স্থান পেয়েছে। কিন্তু দলে সাহসী লোক থাকা প্রয়োজন। জাফরুল্লাহ সাহেব যাদের নাম লিখেছেন, তারা যদি বিএনপিতে আসেন, তাহলে ভালো হবে।’






জাফরুল্লাহ যা বলছেন






খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে লেখা খোলা চিঠিতে যাদেরকে বিএনপিতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা না বলার কথা স্বীকার করেছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করেছি, তারা প্রত্যেকে গুণী ব্যক্তি। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। আমি জানি তারা কেউ বিএনপি করেন না। কিন্তু তাদের কোনো দলে সংযুক্ত করলে সেটা ভালো হবে। আর শুধু বিএনপি কেন, এই গুণী ব্যক্তিদের সরকারি দলেও নেয়া যেতে পারে।’






নাম না বলে চিঠিতে নাম উল্লেখ করায় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে- অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের এই প্রতিক্রিয়ার কথা জানালে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। আমি তাদের সম্মান করার জন্য নাম উল্লেখ করেছি। আশা করি তারা আমাকে ভুল বুঝবেন না। তা ছাড়া নাম দিয়েছি বলে তারা বিএনপিতে যাবেন এমনটা তো নাও হতে পারে।’






(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এইচআর/এমএইচ/ডব্লিউবি)