রাজনীতি জীবনের শুরু আওয়ামী লীগেই। তবে চট্টগ্রামে মেয়র হয়েছেন বিএনপির সমর্থনে নির্বাচন করে। আরেকবার ভোট করে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার আওয়ামী লীগের ফেরার গুঞ্জন। সত্যটা কী? জানতে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল এম মঞ্জুর আলমের সঙ্গে। জবাবে তিনি বললেন, ‘এখনও ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে ভেবে দেখবো।’
চট্টগ্রামের সাবেক এই মেয়র বলেন ‘বর্তমানে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশুনা ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকা- নিয়েই ব্যস্ত আছি। আপাতত এইভাবেই চট্টগ্রামবাসীর খেদমত করে যেতে চাই।’
আওয়ামী লীগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেলে আবার ফিরে আসবেন কি না জানতে চাইলে মঞ্জুর আলম বলেন ‘এখনো ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেইনি, তবে যদি এরকম কোন প্রস্তাব আসে তখন ভেবে দেখবো।’
মঞ্জুর আলমকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১ তম শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ থেকে। মঞ্জুরের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফাউন্ডেশনের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। এরপরই তার আওয়ামী লীগের ফেরার গুঞ্জন উঠে।
তবে যাকে ঘিরে এতসব আলোচনা সেই মঞ্জুর আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন আমার জন্য নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রতিবছরইতো আমি যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছি। আমি মনে করি এটা আমার জন্য একটা ফরজ কাজ।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বলেন, ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফাউন্ডেশন আমার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এর চেয়ারম্যান ও আমি নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে ১০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই।’
মাঝে বিএনপির নেতা হিসেবে বেশ কয়েকবছর রাজনীতি করা এই রাজনীতিক নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তিনি সারা জীবন লালন করবেন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও নেতৃত্বে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। তার আদর্শের বাইরে তো কেউ থাকতে পারে না।’
রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণার পর কী করছেন, জানতে চাইলে মঞ্জুর আলম বলেন, তিনি চট্টগ্রামবাসীর জন্য নানা সেবামূলক কর্মকা- করে যাচ্ছেন। বলেন, ‘এখনো অনেক মানুষ নানা প্রয়োজনে আমার কাছে ছুটে আসেন। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করি তাদের পাশে থাকতে।’
এম মঞ্জুর আলম কেবল নিজে নন, তার গোটা পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত বা জড়িত ছিলেন। তার প্রয়াত বাবা আব্দুল হাকিম ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের সমর্থনে মঞ্জুর আলম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিন দফা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সে সময়ের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান মঞ্জু।
২০১০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক সময়ের রাজনীতিক গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপক্ষে মঞ্জুর অংশ নেন বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন নিয়ে। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঝানু রাজনীতিকবিদ হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দেন মঞ্জুর।
এই নির্বাচনের পর মঞ্জুরকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন মঞ্জুর আলম। কিন্তু ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় নির্বাচন বর্জন করে রাজনীতি থেকেও চিরতরে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে প্রায় দেড় বছর ধরেই রাজনীতির মাঠে দেখা নেই মঞ্জুর আলমের। আর বিএনপি আগস্টের শুরুতে নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দিয়েছে তাতে এম মঞ্জুর আলমের নাম নেই।
ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/এসইউ/ডব্লিউবি