খালেদা জিয়ার ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়তে জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলোচনা নিয়ে জোটের শরিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত বিএনপি। অন্য কোনো দল এলে জোট ত্যাগ করার বিষয়ে দুটি দল হুমকি দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে দলটিকে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে জঙ্গিবিরোধী ঐক্যের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে একই ধরনের আহ্বান জানান খালেদা জিয়াও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন, জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তাই বিএনপির ঐক্যের ডাককে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। তবে বিএনপি খালেদা জিয়ার এই আহ্বানকে সামনে এনে বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিতে থাকেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার পর বিএনপি আবারও গণমাধ্যমে জায়গা করে নেয় কার্যত এই প্রস্তাবের পরই।
এরই মধ্যে খালেদা জিয়া তার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে। বৈঠক করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে। এসব আলোচনায় উঠে এসেছে জামায়াত প্রসঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল,আ স ম আব্দুল রবের জাসদও জামায়াত থাকায় বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে। আর সরকারি দল জাতীয় ঐক্য চাইলে প্রয়োজনে জামায়াতকে ছাড়াই চলবে বিএনপি-এমন কথাও বলা হচ্ছিল বিএনপির পক্ষ থেকে।
ঠিক এই অবস্থায় জোটের দুই শরিক দল এলডিপি ও লেবার পার্টি জানিয়ে দেয় নতুন দল অন্তর্ভূক্ত হলে তারা বিএনপির সঙ্গে জোট ত্যাগ করবে।
বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে নানা কথাবার্তা থাকলেও এরমধ্যে কমিটি নিয়ে কারো কারো অসন্তোষ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আশা করি শিগগিরই এই অবস্থার উন্নতি হবে। কারণ জাতীয় ঐক্য হতেই হবে।’
জামায়াতের ইন্ধনের সন্দেহ
যখন জোটের বাইরের দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের জন্য জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছে তখন নতুন দল এলে কোনো কোনো দলের জোট ছাড়ার ঘোষণা মধ্যেই শরিক দলগুলোতে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ একে বিএনপির প্রতি জামায়াতের পরোক্ষ হুমকি হিসেবে দেখছেন। এসব দলের নেতারা বলছেন দাবি, জোটে থাকলেও কয়েকটি ছোট ছোট দল জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। যা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। এ কারণেই এমন বক্তব্য আসছে।
জোটের বৈঠকেও জামায়াত নিয়ে যারা আপত্তি করছে তাদের থেকে নিজেদের ভোটের মাঠে অবস্থান ভালো নয় বলে দাবি করেছিল জামায়াতের প্রতিনিধি। কিন্তু খালেদা জিয়া নিজেই তাদের এমন দাবি খণ্ডন করে বলেছেন, ভোটের মাঠে সেইভাবে দখল না থাকলেও ব্যক্তি হিসেবে এসব নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা ভালো আছে।
জোটের একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যারা এখন কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকীরদের জোটে নেয়ার বিরোধিতা করছেন তারা সাম্যবাদী দল, কাজী জাফর আহমদের দলকে জোটে নেয়ার সময় কথা বলেননি কেন? আমরা যে মতাদর্শের রাজনীতি করি সাম্যবাদী দল তো সেই আদর্শের রাজনীতি করে না। আবার জোটের বৈঠকে যখন এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তখন কেউ কথা বলেনি কেন। তারা আসলে ঐক্য চায় কিনা সন্দেহ আছে।’
তবে জোটের স্বার্থ না দেখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে লেবার পার্টি। দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকীকে জোটে নেয়ার বিষয়ে বিরোধিতা ব্যক্তিগত নয়, সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা। কারণ আমরা যেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন করছি সেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে মানবেন না এমন লোক জোটে আসলে আমরা থাকবো না। কারণে সে তো প্রধানমন্ত্রীর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করবেন।’
জামায়াতের উদ্দেশ্য সফল করতে লেবার পার্টি এই বিরোধিতা করছে কি না জানতে চাইলে লেবার পার্টির সভাপতি বলেন, ‘কারো পারপাস সার্ভ করা লেবার পার্টির কাজ নয়। কিন্তু আমাদের কথায় যদি কারো লাভে আসে, এর ফলাফল জামায়াত কেন বিএনপিও যদি ভোগ এবং কারো উদ্দেশের সঙ্গে মিলে যায় সেখানে আমাদের কারো বলার কিছু নেই।’
জোট ভাঙার হুমকির বিষয়ে লেবার পার্টি আর এলডিপির বক্তব্য একই কারণে বলে মনে করেন না শরিক দলের নেতারা। দুটি দলের মহাসচিব ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাদের ধারণা আলোচনায় থাকার জন্য এলডিপির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। নতুন দল জোটে আসলে এলডিপি গুরুত্ব হারাতে পারে।
নতুন দল জোটে আসলে আপত্তি কেন, জানতে চাইলে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে কাদের সিদ্দিকীর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার নয়। সরকারের সুনজরে আসার জন্য তিনি এখন নানা কথাবার্তা বলছেন। কারণ দেশের যে সংকটময় মুহুর্তে ঐক্য নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে তিনি গণমাধ্যমে যেভাবে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এটা শোভনীয় নয়। তার এমন বক্তব্যে আমরা অস্বস্তিবোধ করছি। অপমানিত বোধ করেছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/বিইউ/ডব্লিউবি)