logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনির ফাঁসি কার্যকর অনিশ্চিতই রইল
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:৩৩:৪৬
image




বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও বিদেশে পলাতকদের দণ্ড আদৌ কার্যকর করা যাবে কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই সাত জনের মধ্যে একজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। আর তিন জনের অবস্থানের তথ্য জানলেও তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের চেষ্টা আলোর মুখ দেখছে না।



স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরেক খুনি মোসলেম উদ্দিনও এই দেশে আছেন বলেও তথ্য আছে সরকারের কাছে। আর কানাডায় থাকেন নূর চৌধুরী। এদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে দেশ দুটি জানিয়েছে, তারা মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিরোধী এবং এ কারণেই এদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখায়নি দেশ দুটি।



পলাতক অন্য তিন জন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম এবং আব্দুল মাজেদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।



বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে সরকার টাস্কফোর্সও গঠন করে। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই টাস্কফোর্স গত সাত বছরে কার্যত কিছুই করতে পারেনি।



জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের টাস্কফোর্সের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি নেই।’



১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার দায়ে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আর আবদুল আজিজ পাশা বিদেশে মারা যান বলে তথ্য আছে সরকারের কাছে।



পাঁচ খুনির দণ্ড কার্যকরের পর বাকিদের বিষয়ে তথ্য পেতে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করে সরকার। কিন্তু ছয় বছরেও কোনো তথ্য আসেনি সরকারের কাছে।



জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট এখনো বহাল।’



পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নিঃসেন্দেহে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করা আমাদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর একটি হতো। কিন্ত তাদেরকে (বঙ্গবন্ধুর খুনি) ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বেশ কিছু বাধা-বিপত্তি আছে। এর মধ্যে একজন (রাশের চৌধুরী) একটি দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। ওই আশ্রয় বাতিল করাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। অন্যদিকে কানাডায় নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় তাকে ফেরত দিতে চাইছে না দেশটি। কারণ তারা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না।’



বিচারের ক্রমধারা



বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আইন করে ইনডেমনিটি জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে হওয়া ইনডেমনিটি আইন বাতিল হয় ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর।



পরের বছর ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। তবে বিচারক বিব্রতসহ নানা কারণে ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম আবার স্থগিত হয়। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারপতি কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেয়।



বিচারপতি এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন এবং অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন।



২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিভক্ত রায়ের ফলে একই বছরের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন।



২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতি দেয়।



২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে। ওইদিনেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির আপিল আবেদন খারিজ হয়।



২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।



ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এইচআর/ডব্লিউবি