প্রশাসনে পদোন্নতির তিন মাসের মাথায় আবার উপসচিব-যুগ্ম সচিব পর্যায়ে বড় ধরনের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদেও শিগগির পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
আসন্ন পদোন্নতির প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে। নিজেদের পদোন্নতির দাবিতে যুক্তি তুলে ধরে বিভিন্ন সচিব বরাবর আবেদন চালাচালি করছেন তারা।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ-সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবির) সভায় নতুন করে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির পদক্ষেপ নিয়েছি। পদোন্নতির চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে কিছু সময় লাগতে পারে। কারণ যোগ্যতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এই তালিকা তৈরি করা হবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব জানান, এখন ২১তম ও ২২তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডারদের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এ ছাড়া গতবার যারা বাদ পড়েছেন তারাও এবার পদোন্নতির তালিকায় থাকবেন।
এদিকে এই পদোন্নতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা না করা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাচ ও ক্যাডারের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে মূলত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ২ জুন প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি।
তাতে ২৬ বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ১০ জন কর্মকর্তার তালিকা চাওয়া হয় মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে। এর মধ্য দিয়ে এবারের পদোন্নতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ইতিমধ্যে গ্রেড-৪ এ চলে যাওয়া কর্মকর্তাদের।
জনপ্রাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া যারা ইতিমধ্যে গ্রেড-৪ পেয়েছেন, তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে না। তাদের নাম বাদ দিয়ে ১০ জন কর্মকর্তার নাম পাঠাতে বলা হয়। উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।
নতুন করে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ-সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং অর্থ বিভাগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লিখিত আবেদন দিয়েছেন বিসিএস ১৩তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা।
আজ রবিবার ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের পদোন্নতির জন্য স্মারকলিপি মন্ত্রিপরিষদ-সচিবকে দেবেন বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
প্রশাসনে এখন ২১তম ও ২২তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার চিন্তাভাবনা চললেও ২১তম ব্যাচ ও ২৬ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
অপর দিকে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য যারা ইতিমধ্যে গ্রেড-৪ পেয়েছেন তারা উপসচিব পদে পদোন্নতি পাবেন না। প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেড-৪ পাওয়া কর্মকর্তারা উপসচিব পদের পদোন্নতির পাওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং অর্থ বিভাগে সিনিয়র সচিবকে লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা স ম গোলাম কিবরিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০০৯ সালের নীতিমালায় বলা আছে কারও চাকরি ১২ বছর হলে তিনি চতুর্থ গ্রেডে বেতনসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। পদোন্নতি না হলেও এ সুযোগগুলো পাবেন তিনি।
স ম গোলাম কিবরিয়া বলেন, একজন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব থাকবেন আর ২১ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা উপসচিব হবেন, তা ঠিক হবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের বলেন, গ্রেড-৪ এর কর্মকর্তাদের যদি উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয় তাহলে এটি কাজের পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই পদটি গ্রেড-৫।
নতুন পদ্ধতিতে অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হবে কি না জানতে চাইলে আবদুল নাসের বলেন, যারা গ্রেড-৪ এর সুবিধাপ্রাপ্ত তারা নিজেদের বিভাগে পদোন্নতি পাবেন।
খুব শিগগির এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, নতুন পদোন্নতি পাওয়া অধিকাংশ অতিরিক্ত সচিব আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন। তখন অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে।
প্রশাসনে একের পর এক পদোন্নতিতে উপরের স্তরে কর্মকর্তার সংখ্যা পদের চেয়ে বেশি হওয়ায় অনেক কর্মকর্তা নতুন দপ্তর পাননি এখনো। এ বছর ইতিমধ্যে তিন দফায় অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে ২২৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। নতুন করে যারা পদোন্নতি পাবেন তাদেরও পুরনো পদেই কাজ করতে হবে বলে প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আলী কবির বলেন, যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু অনুমোদিত পদের বাইরে পদোন্নতি দিয়ে ইতিমধ্যে আমলাতন্ত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া বাড়তি কর্মকর্তারা আগের পদে থেকেই কাজ করছেন। নতুন করে পদোন্নতি এই বিশৃঙ্খলা আরও বাড়াবে।
চলতি বছর ১২ মে ৮৫ জন যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়। এই পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬২। অথচ ওই সময় অনুমোদিত পদ ছিল মাত্র ১২০টি।
এর কয়েক দিন পর ৭১ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ফলে ৮৩০টি পদের বিপরীতে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩৪৪ জন।
৭৩ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিবে পদোন্নতি দেয়ার পর ৩৫০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে যুগ্ম সচিবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪২ জন।
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/মোআ)