গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নরসিংদীর রুমা আক্তারকে আটকের কথা কখনও স্বীকার করেনি পুলিশ বা র্যাব। ‘নিখোঁজের’ ১৯ দিন পর গত সোমবার বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এই সময় পুলিশ এবং র্যাব-দুই বাহিনীই তাকে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন রুমা আক্তার।
তবে রুমাকে তুলে আনার বিষয়ে স্বজনদের অভিযোগের মতো তার বাড়ি ফেরার পর দেয়া তথ্যও অস্বীকার করছে পুলিশ-র্যাব দুই বাহিনীই। মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনাটিকে দেখছেন আইনের প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর অশ্রদ্ধা হিসেবে।
আইন অনুযায়ী কাউকে আটক করা হলে তাকে এর কারণ জানাতে হয়। পাশাপাশি পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি সুবিধা নেয়ার অধিকার থাকে আটক ব্যক্তির। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে তুলতে হয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালত এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু রুমা আক্তার এর কোনো সুবিধাই পাননি।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালন নূর খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রুমার অভিযোগ খুবই গুরুতর। শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল রুমা আক্তারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নিয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে তিনি এই কথাই বলেছেন। তার কথা যদি সত্য হয় তাহলে বলবো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেআইনি কাজ করেছে। আর পুলিশ-র্যাব যদি এটা অস্বীকার করে তাহলে কারা তাদের নামে একজন নাগরিককে তুলে এনে বন্দি রেখেছে সেটা খতিয়ে দেখাও তাদেরই দায়িত্ব।’
রুমা যা বলছেন
হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় রেস্টুরেন্টটির বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এক নারীসহ কয়েকজনকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। আর সন্দেহভাজন হিসেবে গত ২০ জুলাই নরসিংদীর শিবপুর এলাকা থেকে রুমাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে আনা হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা।
স্থানীয় থানার পুলিশও একই কথা বলেছেন। তবে শুরু থেকেই র্যাব-পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা-কেউই এই অভিযোগ স্বীকার করেননি। আর গত আট আগস্ট বাড়ি ফেরেন রুমা। তার আগের দিন রুমাকে নিয়ে যেতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে রুমার বোনজামাইকে ফোন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন রুমার বোন সাবিনা আক্তার। তবে সে কথাও অস্বীকার করে পুলিশ।
বাড়ি ফেরার পর ঢাকাটাইমসের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় রুমা আক্তারের। ১৯ দিনের বন্দি জীবনের কথা জানিয়েছেন তিনি।
রুমা আক্তার বলেন, ‘আমারে ধইরা নিয়া ডিবি অফিসে নেয়া হয়। সেখানে আমাকে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া দেওয়া হত। কিন্তু হাতে একটি মোটা লাঠি দেখায়া তথ্য চাওয়া হয়।’
‘আপনার কাছে কি জানতে চাওয়া হয়েছিল?’-জবাবে রুমা বলেন, ‘আমি কেন গুলশানে ওই জায়গায় গেছিলাম। কতক্ষণ হেইহানে আছিলাম। আমি কী কী দেখলাম। কার কার সাথে কথা হইছে-এইসব আরকি।’
রুমা জানান তাকে তিনদিন ঢাকামহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়। এরপর নেয়া হয় র্যাব অফিসে। সেখানে তিনদিন চোখ বেঁধে রাখা হয়। তবে মাঝেমধ্যে বাঁধন খুলে দেওয়া হত।
‘র্যাব অফিস বুঝলেন কীভাবে?’-জানতে চাইলে রুমা বলেন, ‘কাল ড্রেস পইরা থাকত স্যাররা।’
র্যাব অফিস থেকে আবার তাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয় বলে জানান রুমা। বন্দি থাকাকালে ভালো খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। গোসল, ঘুমসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই পাওয়ার কথা জানান তিনি।
‘স্যারেরা আমারে নিয়া অনেক মজা করতো। যেইদিন ছাইরা দেওয়া হয়, সেইদিন আমারে নেওয়া হয় আদালতে। মেজিস্টেটের সামনে আমার বক্তব্য লেখা হয়। এরপর এই স্যারের কথায় ছাইরা দেওয়া হয়’-বলেন রুমা।
রুমা আক্তারের বোন সাবিনা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যেইদিন আমার বোনকে ছাইরা দেয়া হয় সেইদিন আমার বাবাকে ডিবির একজন স্যার মাথায় পিঠে হাত বুলায়া কইছে, তদন্তের জন্য আপনার মেয়েরে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিছু মনে করবেন না। আমার আব্বা বলছেন, ঠিক আছে।’
রুমা ও তার স্বজনদের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মুহাম্মদ ইউসুফ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা রুমা আক্তারের একান্ত নিজস্ব বক্তব্য। আমরা তাকে কখনও আটক করিনি সুতারাং তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা র্যাব অফিসে নেওয়া, চোখ বাঁধা-এর কিছুই সত্য না।’
রুমার বিষয়ে র্যাবের বক্তব্যও একই রকম। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ ধরনের কথা আপনার কাছে এই প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি)