কমল হরি দত্ত। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগানের শ্রমিক। চার মাস ধরে বেতন-ভাতা-রেশন পাচ্ছেন না। কবে পাবেন তাও জানেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অসুখ-বিসুখে নেই ওষুধ কিংবা চিকিৎসা।
শনিবার সন্ধ্যায় কমল হতাশ কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৫ সপ্তাহ ধরে তারা বেতন-রেশন পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছেন না, তাও নির্দিষ্ট করে বলছে না চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। কোনো মহল থেকে তারা কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না।
কমল জানান, এই চা-বাগানে কাজ করে ৪১৬ জন শ্রমিক। এসব শ্রমিকের পরিবারের আড়াই হাজারের মতো সদস্য, যাদের একমাত্র উপার্জন ও ভরণ-পোষণের মাধ্যম এই চা-বাগান। এখন অনাহার আর বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার মাস ধরে রেশন-মজুরি বন্ধ থাকা বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগানের চলমান সংকটের এখন পর্যন্ত (১৩ জুলাই) সুরাহা হওয়ার লক্ষণ নেই। শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজমান অসন্তোষ দিন দিন পরিণত হচ্ছে ক্ষোভে। সংকট সমাধানের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে চলেছেন।
সংকট সমাধানের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চা-শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
সাত মাস ধরে চা-বাগানের হাসপাতাল বন্ধ থাকায় কোনো ধরনের ওষুধ কিংবা চিকিৎসা পাচ্ছেন না অনাহারে-অর্ধাহারে অসুস্থ হয়ে পড়া চা-শ্রমিকরা। তাদের ২৪ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা না দিয়ে তা কর্তৃপক্ষ আত্মসাৎ করেছে বলেও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
আর এসব ঘটনার প্রতিবাদে ও বাগান বাঁচাতে আন্দোলনে নেমেছেন চা-শ্রমিকরা। এরই মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, ডিসি ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিব কর্মকার বলেন, একদিকে রেশন-মজুরি বন্ধ, অন্যদিকে শ্রমিকদের বিকল্প কোনো কাজের সুযোগ নেই। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে তারা জীবন-যাপন করছেন। অসুখে-বিসুখে মরছে শ্রমিকরা। কিন্তু তোদের দেখার কেউ নেই।
বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগানের শ্রমিক নেতা শাওন রবিদাস বলেন,চলমান সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অবগত করা হলেও এখন পর্যন্ত কারো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখছেন না তারা। এ জন্য চা-শ্রমিকরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন।
এই চা-বাগানের মালিক বি ডি মুখার্জি এবং পি কে মুখার্জি নামের দুই সহোদর। গত ১৭ মে লোকসান দেখিয়ে মালিকপক্ষ বাগানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ৯৫৬ একর আয়তনের বাগানটিতে ৪১৬ জন শ্রমিক কর্মরত আছেন।
শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে মালিকপক্ষ বাগানে আসা-যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাগানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নিয়মিত কার্যালয়ে আসছেন না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বাগানের মালিক দুই সহোদরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাবুল চৌহান বলেন, এ বছর কোনো ধরনের কীটনাশক ও সার ছাড়াই চায়ের ফলন ভালো হয়েছে। অথচ মালিকরা সব সময়ই লোকসানের অজুহাত দেখাচ্ছে।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি চা-বাগানের মালিক বি ডি মুখার্জির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি (মুখার্জি) প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেছেন যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করবেন।
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এমএম/মোআ)