নানা প্রচার প্রচারণার পরও পশুকে দ্রুত মোটাতাজা করতে ক্ষতিকর ট্যাবলেটের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে নিষিদ্ধ এসব ওষুধের চোরাচালান সম্প্রতি আবার বেড়েছে।
গত বুধবার দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের বিশাপাড়া এলাকা থেকে আটক হয়েছে কয়েক বস্তা ট্যাবলেট। পরে সেখান থেকে পাওয়া যায় তিন লাখ ২৩ হাজার ট্যাবলেট। এর মধ্যে ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার নিমোসলিড, এক লাখ ৩৩ হাজার প্যারাকটিন, ও ৪৫ হাজার সেটম্যাক্স ট্যাবলেট।
তবে এই ট্যাবলেট উদ্ধার হলেও চোরাচালানে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
বিজিবি হিলি বাসুদেবপুর ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার রফিকুল ইসলাম জানান, চোরাকারবারিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাঁচটি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়।
সোমবার একই এলাকা থেকে তিন লাখ ২২ হাজার ট্যাবলেট জব্দ করেছিল বিজিবি। তখনও চোরাচালানে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আযহা। এই ঈদে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার প্রধান বিষয় পশু কোরবানি। ধর্মীয় বিধান মতে, স্বাস্থ্যকর পশু কোরবানি দিতে হয়। আর ঈদে বিক্রির জন্য আগে থেকেই পশু মোটাতাজা করার রীতি আছে।
বছর জুড়ে যতœ করে পশু মোটাতাজা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে খামারিদের পরিশ্রম যেমন বেশি হয় তেমনি খরচও লাগে অনেক। কিন্তু স্টেরয়েডজাতীয় কিছু ট্যাবলেট আছে যেগুলো পশুকে খাওয়ালে শরীরে পানি আসে এবং এ কারণে এদেরকে মোটা দেখায়। এ কারণেই কম খরচে আর অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়ার আশায় হাটে তোলার কিছুদিন আগে পশুকে এসব ট্যাবলেট খাওয়ায় কেউ কেউ। আর এর প্রভাবে গায়ে পানি আসে পশুর এবং এ কারণে স্বাস্থ্য ভালো না হলেও তাদেরকে মোটা দেখায়।
মোটা দেখালেও এসব ওষুধের প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে পশু। ফলে বেশিদিন বাঁচে না সেগুলো। প্রায়ই হাটে তোলার পরই মারা যায় কিছু পশু।
বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ট্যাবলেট খাওয়া ফোলা পশুর মাংস হয় স্বাদহীন। আবার এর প্রভাবে মানুষের কিডনির ক্ষতি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, আথ্রাইটিস, চোখে ছানিসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে এই মাংস খেলে। পাশাপাশি শরীরে পানি জমে যাওয়া, মুত্রনালী ও যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা ও চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
পশুকে মোটা দেখাতে ট্যাবলেট না খাওয়াতে প্রতি বছর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সচেতনতামূলক প্রচার চালায়। এ জন্য শাস্তির ব্যবস্থাও আছে, যদিও কেউ সাজা পেয়েছে-এমনটা বিরল। আবার জনসচেতনতার দিক থেকে আশাবাদী হওয়ার মত কিছু অর্জন করা যায়নি।
সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নদী গোপাল বর্মন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ ওষুধ আসছে এটা সত্য। আর এ বিষয়ে আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে করণীয় কিছু নেই। আমরা খামারিদেরকে নানাভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
কী ধরনের চেষ্টা চলছে-জানতে চাইলে এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠক করে এসব ক্ষতিকর উপাদানের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। কীভাবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে দ্রুত পশুকে মোটাতাজা করা যায় মোবাইল ফোনে সে বিষয়ে খামারিদেরকে পরামর্শও দিচ্ছি আমরা।’
এসব কর্মসূচিতে কার্যকর সুফল যে মিলছে না সেটাও স্বীকার করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এ ধরনের প্রচার চলে। সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওষুধ আসছে এবং এগুলো দিয়ে পশুকে মোটা বানানো হচ্ছে।’
ক্রেতাদেরকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ননী গোপাল বর্মন বলেন, ক্ষতিকর জেনেও অসৎ ব্যবসায়ীরা যেহেতু ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করছেন তাই পশু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকেই সচেতন হতে হবে।
ক্রেতারা কীভাবে বুঝবে এই পশুকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মোটা করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিকারক ওষুধ খাইয়ে মোটা করা পশু ভালোভাবে দেখলে বোঝা যাবে। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি মোটা বা নাদুসনুদুস দেখায়। এগুলো ঝিমাবে, তাকে অনেক ক্লান্ত দেখাবে।
ননী গোপাল বর্মন বলেন, মোটা হলেও এসব পশুর চামড়া ঢিলা থাকবে। সবচেয়ে বড় লক্ষণ গায়ে চাপ দিলে মাংস দেবে যাবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ/ডব্লিউবি)