logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
আফসানার মৃত্যু: তিন প্রশ্নের জবাব মিলছে না
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
২৪ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:২৩:১৫
image




রাজধানীর মিরপুর সাইক ইনস্টিটিউটের ছাত্রী আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যুর জট খুলছে না। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলেই খালাস। পুলিশেরও সেভাবে নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আফসানা যদি আত্মহত্যা করেই থাকেন, উদীয়মান এই তরুণীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলেন কে। এই হত্যার সঙ্গে যে ছাত্রলীগ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে তাকে কেন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? আফসান কি এমনি এমনিই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন?



ছাত্র ইউনিয়নের এই কর্মীর মৃত্যুর রহস্য বের করার জন্য অন্তত তিনটি প্রশ্নের জবাব পাওয়া খুবই জরুরি। এক. আফসানা যদি আত্মহত্যা করেই থাকেন তাহলে কোথায় অর্থাৎ কোন স্থানে তিনি আত্মহত্যা করলেন? দ্রুত সেই স্থানটি খুঁজে বের করা। দুই. তাঁর মরদেহটি হাসপাতালে রেখে যে দুই যুবক পালিয়ে গেলেন তারা কারা? তারা যদি দোষীই না হবেন তাহলে মরদেহ রেখে তারা পালালেন কেন? তিন. যে গাড়িতে করে আফসানার মরদেহ হাসপাতলে আনা হলো সেই গাড়িটিই-বা কোথায়?



মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব প্রশ্নের জবাব জানতে কাফরুল থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় ঢাকাটাইমসের এই প্রতিনিধির। তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনটি প্রশ্ন করা হলে তিনি সবগুলো প্রশ্নই এড়িয়ে যান। প্রথম দুটি প্রশ্নের দায়সারা জবাব দিলেও শেষ প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেন।



তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল-আফসানা যদি আত্মহত্যা করেই থাকেন তাহলে সে কোথায় অর্থাৎ কোন জায়গায় আত্মহত্যা করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। তাঁর কাছে দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- কারা আফসানার মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেলেন? জবাবে তিনি বলেন- তদন্ত চলছে এবং এর বেশি কিছু বলা যাবে না। তাঁর কাছে তৃতীয় প্রশ্ন ছিল- আফসানার মৃত্যুর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রবিনের নাম জড়িয়ে আছে, তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে, তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন।



জানতে চাইলে আফসানার ভাই ফজলে রাব্বি অভিযোগ বলেন, আফসানা আত্মহত্যা করেননি, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছাত্রলীগ নেতা রবিন ও তার বন্ধু মিলে আফসানাকে হত্যা করেছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করলেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।



গত ১১ জুলাই কাফরুলের আল হেলাল হাসপাতালে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আফসানা ফেরদৌসের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় দুই যুবক। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজেও তাদের দেখা গেছে। ওই-দিন রাতে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিন রুমাকে সাগর নামের একটি ছেলে ফোন করে জানায় ‘আমি সাগর বলছি আপনার মেয়ের লাশ মর্গে আছে নিয়ে যান।’ পরে তিনি তাঁর ভাই অধ্যাপক তৌফিক এলাহীকে বিষয়টি জানান। ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আফসানার লাশ শনাক্ত করেন।



আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে কাফরুল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত করছেন কাফরুল থানার উপপরিদর্শক ফজলুল হক।



আফসানার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ.খম শফিই জামান। তিনি তাঁর ভিসেরা ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন ল্যাবে। ওই প্রতিবেদন হাতে না পেলেও তিনি প্রথমিকভাবে বলেছেন আফসানা আত্মহত্যা করেছেন।



ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসকের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন। তারা প্রকৃত দোষী তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করে তার কঠোর শাস্তির দাবি জানান। আফসানার ঘাতককে গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমামেশ ও মানববন্ধন হচ্ছে ।



আফসানার পরিবারের অভিযোগ আফসানাকে হত্যার পর যে সব টেলিফোন নম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে সেগুলো রবীনের বন্ধুদের নম্বর। তাছাড়া টেলিফোনে আফসানার স্বজনদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কইরেন না। একটা মিসটেক হয়ে গেছে। আসেন, আমরা বসে মীমাংসা করে ফেলি।’



(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/এএ /এআর)