তিন ঘণ্টা পর পল্টন ছাড়ল জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:০০:২৭

হলের দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুরানা পল্টন মোড় ছেড়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা এই মোড়ে অবস্থান নেন। এতে এই এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজটের। বেলা দেড়টার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশ করবেন। সেখানে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বুধবার সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়। প্রথমে মিছিল নিয়ে তারা জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত চলে আসে। এরপর তারা আবার পল্টন মোড়ে গিয়ে চারদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পল্টম মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘হল চাই, হল চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। সেখানে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন তারা। একটিতে লেখা ছিল, ‘হল চাই, নইলে ক্যাম্পাসে ঘুমাবো’। একজন লিখেছেন, ‘বুয়ার হাতে রান্না, আর না, আর না।’
কর্মদিবসে শিক্ষার্থীদের এই অবস্থানের কারণে মতিঝিল, গুলিস্তান, কাকরাইল, বিজয়নগর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানজট তীব্র হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ঘিরে রাখলেও কোনো বাধা দেয়নি।
এ বিষয়ে কথা হয় আন্দোলনকারী শিক্ষাথী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র রবিনের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, আজকের আন্দোলন আমাদের পূব ঘোষিত কমসূচি। গত পরশু পুলিশ আমাদের ওপর ববরোচিত হামলা চালায় এর প্রতিবাদে এবং আমাদের আবাসন সংকট নিরসনের জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জায়গায় হল নির্মাণের দাবিতে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’
রবিন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে চলবে। যতক্ষণ আমাদের হল নির্মাণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন কমসূচি চলবে।’
আন্দোলনকালী আরেক শিক্ষার্থী নাইম ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজকে আমরা পূর্বঘোষিত কমসূচির অংশ হিসেবে ৯টায় ক্যাম্পাসে একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে রায় সাহেব বাজার পর্যন্ত এলে পুলিশ বাধা দেয়। তাদের বাধা ভেঙে আমরা সামনে এগোতে থাকি, এর আমরা পল্টন মোড়ে এসে অবস্থান নিই।’
এ বিষয়ে কথা হয় লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহীম খানের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, হলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের আমারা রায়সাহেব বাজার মোড়ে, শাখারী বাজার মোড়ে, বংশালে বেরিকেট দিয়েছি। কিন্তু তরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে বেরিকেড ভেঙে সামনে দিকে চলে যায়। তারা এখন পল্টনে অবস্থান করছে।
গত কয়েক দিন ধরে পুরান ঢাকায় ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছিল। শিক্ষার্থীরা গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে আসার চেষ্টা করলেও তাদেরকে রায়সাহের বাজারে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তবে আজ তাদেরকে পুলিশ বাধা না দিয়ে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত আসতে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে রায়সাহেব বাজারের দিকে আসে। পরে একটি অংশ মিছিল নিয়ে গুলিস্তানের দিকে আসতে থাকলে অন্যরাও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে চলে আসে তারা।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে কার্যত কোনো নেতৃত্ব না থাকায় কোনো শৃঙ্খলা নেই কর্মসূচিতে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি গ্রহণ করছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলের সঙ্গে ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন আছে সাঁজোয়া গাড়িও।
জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের এই মিছিলের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। তাদের মিছিল চলে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল শুরু হলেও তীব্র যানজনের কবলে পড়ে গোটা এলাকা।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে শিক্ষার্থীদের যাত্রায় পুলিশ বাধা দেয়ার পর মঙ্গল ও বুধবার ক্যাম্পাসে ধর্মঘট আহ্বান করে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে বৃহস্পতিবার আবারও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
২০০৫ সালে অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে পরে হলের দাবিতে গত সাত বছর ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩টি ছাত্রাবাস থাকলেও সেগুলো বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।
(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/জিএম/ডব্লিউবি/জেবি)