‘মানুষ মানুষের জন্য’
মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
২৮ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:২৯:০৮

‘আমার নাম পারুল, আমার বাড়ি যশোর।’- শুধু এই দুটি বাক্য বলতে পারেন তিনি। গত প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুখুরিয়া বাসষ্ট্যান্ড এলাকার খোলা ছাত্রী ছাউনিতে বসতি ছিলো তার। কেউ খাবার দিলে খান, না দিলে উপোস থাকেন- এভাবেই অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছিলো পারুলের।
কখনো রোদে পুড়ে, কখনো বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার কোনো বালাই ছিলো না পারুলের জীবনে।
চেহারায় রুক্ষতা, পরনে জীর্ণ কাপড়- সবমিলিয়ে পারুলকে এলাকাবাসী ‘পাগল’ হিসেবেই দেখতো। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী শেষ পর্যন্ত ঠাঁই পেয়েছে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। এখানে তাকে নিয়ে এসেছেন ব্যাংকার শামীম আহম্মেদ, আলী সাব্বির ও তাদের ফেসবুক বন্ধু মোহাম্মদ শামীম হাসান।
‘মানুষ মানুষের জন্য’- এই স্লোগান সামনে রেখে তারা পারুলের মতো অসহায় আর পরিচয়হীন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের পুনর্বাসনে চেষ্টা করছেন তারা।
পারুলের আগে তারা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দারোইয়া গ্রামের শিউলি রানি সরকার ও নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়নপুরের আলাউদ্দিন মিয়ার মেয়ে জবাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তারা এখন পরিবারের সঙ্গে সুস্থ্য জীবনযাপন করছেন। অথচ শিউলি নিখোঁজ ছিলেন সাত বছর, আর জবাকে পরিবার ফিরে পায় ছয় বছর পর। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ কার্যক্রমের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবামূলক এই কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা যমুনা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশের রাস্তাঘাটে এখনো অনেক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী দেখা যায়। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও পথশিশু, হিজরা ও যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের নিয়ে কেউ কাজ করেন না। এদের নিয়ে কেউ ভাবেন না। আমরা তাই এই কাজটি হাতে নিয়েছি। আমাদের দেখে অন্যরা যেন এই কাজটি করেন।’
আরেক স্বেচ্ছাসেবী যমুনা ব্যাংকেরই জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা আলী সাব্বির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে আমরা এই কাজটি হাতে নিয়েছি। বান্দরবন জেলার থানচিতে পাওয়া শিউলী রানি সরকার ছিলো আমাদের প্রথম মানসিক ভারসাম্যহীন রোগি। আর মানিকগঞ্জের পুখুরিয়া বাসষ্ট্যান্ড এলাকার পারুল হলো আমাদের তৃতীয় মানসিক রোগী। সে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।’
এই কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। তারা যখনি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চাইবে তখনি তা করা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/প্রতিনিধি/এমএইচ)