logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
উপাচার্যের মিয়ানমার সফরে বিপাকে শাবি শিক্ষার্থীরা
শাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২২:০০:৫৩
image




শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সংক্ষিপ্ত নোটিশে হল ত্যাগের নির্দেশে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাতে সময় চাইতে গেলে হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।



গত ২৮ আগস্ট ফুটবল খেলার কমিটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন আহত হয়। ওই ঘটনার চারদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নোটিশ দেয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনিবার্য কারণবশত হল বন্ধ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশে উল্লেখ করেছে।



এদিকে সিন্ডিকেট সভা ছাড়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভুইয়ার এককভাবে এ ধরনের নির্দেশনাকে বিধিবর্হিভূত বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক সিন্ডিকেট সদস্যরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সংকটকালিন মুহূর্তে উপাচার্যের মিয়ানমার সফরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।



সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম এই সিদ্ধান্তকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যখনই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তখনই জরুরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এইসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে উল্লেখ বরেন তিনি।’



আরেক সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিনও সিন্ডিকেট ছাড়া হল বন্ধের সিদ্ধান্ত অবৈধ । তিনি বলেন, ‘একমাত্র সংকটকালীন সময় ছাড়া সিন্ডিকেটও হল এবং বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ করতে পারে না। এটা ‘সম্পূর্ণ অবৈধ’।’



বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এটার ব্যাখ্যা তো আর আমি দিতে পারব না। হয়ত উত্তেজনা যেন আর না বাড়ে তাই ভিসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’



তবে একজন প্রবীণ শিক্ষক ও সিন্ডিকেট সদস্য কর্তৃক ব্যাখ্যা না জানার বক্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।



বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস নোটিশে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রদের এবং শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ক্লাস-পরীক্ষা চলায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিকালের দিকে নোটিশটি সম্পর্কে অবহিত হন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল ত্যাগ করতে না পারলেও সন্ধ্যা ৬ টার আগেই শাহপরান হলের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় হল প্রশাসন।



একপর্যায়ে কাপড় গোছানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অনুরোধ করলে সহকারি প্রভোস্ট প্লাবন চন্দ্র সাহা, ওমর ফারুক, শাহেদুল হোসাইন ও জাভেদ কায়সার অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।



শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের প্রত্যেকটা ব্লকে গিয়ে চিৎকার করে, দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও লাথি দিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন।



তবে হল প্রশাসনের ঘোষিত প্রথম নোটিশে বিসিএস পরীক্ষার্থীসহ একাডেমিক কাজের জন্য কোনো আবাসিক ছাত্র প্রভোস্টের অনুমতি সাপেক্ষে হলে থাকতে পারবেন বলা হলেও পরবর্তীতে ঢালাওভাবে সকল শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়।



ফলে বৃহস্পতিবার ৩৬ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ না করতে পারায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন। তবে ছাত্রী হলগুলোতে হল প্রভোস্টের অনুমতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীসহ একাডেমিক কাজে থাকা শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারছেন।



এদিকে উপাচার্য ব্যক্তিগত ভ্রমণে মিয়ানমার যাচ্ছেন জানিয়ে রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, এসময়টাতে কোষাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শুক্রবার রাত ১২টার ফ্লাইটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভুইয়ার মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দিছেন।



কোষাধ্যক্ষ ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ^াস বলেন, ‘তিনি আজ (শনিবার) থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।



এর আগে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার দুইদিন পরেই তদন্ত কমিটির সদস্য নিয়ে ভারত সফরে যান শাবি উপাচার্য। ফলে তদন্তের কাজ ব্যাহত হয়।



(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএ)