logo ০৩ জুলাই ২০২৫
কোরবানি পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা
ইসরাত জাহান
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৪৬:৩৯
image




ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্দেশ্য অত্যন্ত পবিত্র। তারা সব সময়ই সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় থাকে। তেমনি মুসলমানদের আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছানোর একটি উত্তম পথ কোরবানি দেওয়া। নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক মুসলমান ওয়াজিব হিসেবে কোরবানিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। কোরবানি মহিমার বিষয়, শুধু পশু জবাই নয়, এর সাথে ত্যাগ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয় জড়িত। মুসলমানরা তাদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হিসেবে ঈদুল আজহার দিন বা পরবর্তী দুই দিন পশু কোরবানি দিয়ে থাকে।



কোরবানি দেওয়া অত্যন্ত আনন্দের, এ আনন্দ ত্যাগের। তবে আমরা সচেতন নই বলে আনন্দের চাইতে অসুবিধার মুখোমুখি হই বেশি। কারণ যত্রতত্র কোরবানি দেই; চামড়া, রক্ত, ব্যবহৃত চাটাই ইত্যাদি যাবতীয় আবর্জনাও যেখানে-সেখানে ফেলে দেই। ফলে খুব দ্রুত জীবাণু সংক্রমণসহ দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।



সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি মুসলিম দেশে কোরবানি একটি নির্দিষ্ট স্থানে দেওয়া হয়। তারা মসজিদ, লাইসেন্সপ্রাপ্ত জবাইখানাতে কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্রটি ফুটে ওঠে।



কোরবানির কাজটির সাথে পশু কেনাবেচা, হাট (যেখানে পশু রাখা হয়), পশুর খাবার, মলমূত্র ইত্যাদি নানান বিষয় আমরা নিজেরাই ঠিক করে থাকি। তবে আমাদের পরিকল্পনা করে কাজে হাত দিতে হবে। রাস্তার ধারে পশু জবাই অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। রাস্তায় কোরবানি দেওয়ার ফলে ভোগান্তি বাড়ে অনেক। রাস্তা পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত দরূহ কাজ।



যত্রতত্র পশু কোরবানির ফলে বিবিধ স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপত্তি ঘটে থাকে। এ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়াতে রক্ত ও চামড়ার একটি বিষয় থাকে। আমরা জানি, এগুলো পচলে মারাত্মক গন্ধ বের হয় এবং বায়ু, পানি ও মাটি- তিনটি প্রাকৃতিক উপাদানই দূষিত হয়। এটার একটা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বা প্রভাব আছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে বেশি।



আমরা মাঝে মাঝেই দুর্গন্ধ এড়াতে এবং জীবাণুনাশ করতে ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করি। কোরবানির সময় বর্জ্যরে ওপরে, কিংবা যেসব জায়গায় রক্ত পড়ে সেখানে ছিটিয়ে দিলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। তবে ডিডিটি পাউডার ব্যবহারেও অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। এটি মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।



কোরবানি পরবর্তী বিপত্তি মোকাবিলায় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। সব সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর পৌরসভায় জনস্বার্থে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (এওট) নভেম্বর ২০১৫ থেকে কাজ করছে অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে। পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই কার্যক্রমকে মূলত তিনটি পর্যায়ের অধীনে এওট এর মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যা সকল বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন জেলা সদর ও পৌরসভায় প্রেরণ করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই কার্যক্রমের বিষয়টি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়- (১) কোরবানির পশু সংখ্যার নিরিখে কোরবানির স্থান নির্ধারণ ও কোরবানি প্রদানের উপযোগীকরণ, জনমত গঠন ও প্রচার, বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদান, সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ ও তার সংস্থান; (২) সুষ্ঠুভাবে কোরবানি প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং (৩) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।



কোরবানি করা পশুর হাঁড়, লেজ, কান, মাথার খুলি ও পায়ের অবশিষ্টাংশ অবশ্যই এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে কোনো মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে জড়িয়ে সেটি কাছাকাছি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেওয়া। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরিয়ে নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।



কোরবানির সময় ব্যবহৃত পাটি, হোগলা, ন্যাকড়া, কাপড় বা কাঠের গুঁড়ি- এ ধরনের সামগ্রী রাস্তায় না ফেলে সেসব বস্তু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে কোরবানি আদায়কারীর সচেতন হতে হবে। কোরবানি যেন অন্যের বিরক্তি বা অসুবিধার কারণ না হয় সেদিকে অবশ্যই যতœবান থাকতে হবে।



ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিটি কর্পোরেশন মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পৌরসভা মেয়রগণ বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদরগুলোতে পৌরসভাসমূহে কোরবানির উপযোগী করার কাজ প্রায় সম্পন্ন।



কোরবানির পশু কেনা ও কোরবানি পূর্ববর্তী সময়েও পশুর সেবা-পরিচর্যার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। কোরবানির দুই বা তিন দিন আগে কেনা গরু, ছাগল, খাসি, মহিষের যতœ ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও কোরবানির অংশ। রাস্তায় বা যেখানে-সেখানে কোরবানির পশু বেঁধে না রেখে বাসা-বাড়ির আঙিনায় একটি উপযুক্ত স্থানে রাখা প্রয়োজন। পশুর মলমূত্র নিয়মিত পরিষ্কার ও স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। পশুর খাদ্য ও পানীয় পরিচ্ছন্নভাবে রাখতে হবে। প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। কোরবানির পূর্বেই পরিবেশ যেন অস্বাস্থ্যকর ও অশোভনীয় না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।



এ বছর সম্ভাব্য ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫২ জন কোরবানিদাতা ৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৪০টি পশু কোরবানি করবেন। এওট তে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতকৃত একটি বিজ্ঞাপন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দিতে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। মোবাইলে বার্তা প্রেরণ করছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। আমরা যে যার এলাকায় আলোচনা করছি, প্রচার করছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায়ও নামছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।



আমরা সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব। কারণ, শুধু সরকারি পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না। সবাই যে যার এলাকার বিষয়ে সচেতনতা দেখালে, বেশি বেশি প্রচার করলে ছোটো ছোটো পদক্ষেপই বৃহৎ আকারে কার্যকর হবে। সকলে মিলে নিজ নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখবো- কোরবানির আগে-পরে সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর শহর উপহার দিব।